স্পটিফাইয়ের ‘এআই’ সমস্যা: ডালাসের শিল্পীদের গান মুছে ফেলা হচ্ছে
ক্যাথারিন প্যাটারসন, রোজি এল এবং দ্য ডেডলি বিলাভড—ডালাসের এই তিনজন স্বাধীন সংগীতশিল্পী ও ব্যান্ড সম্প্রতি স্পটিফাই থেকে তাঁদের গান মুছে ফেলার শিকার হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—এআই প্লেলিস্টে গান যুক্ত হওয়ার ফলে অস্বাভাবিক স্ট্রিমিং বেড়েছে, যা স্পটিফাইয়ের মতে বট ব্যবহার করে কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হয়েছে।

ক্যাথারিন প্যাটারসন, রোজি এল এবং দ্য ডেডলি বিলাভড—ডালাসের এই তিনজন স্বাধীন সংগীতশিল্পী ও ব্যান্ড সম্প্রতি স্পটিফাই থেকে তাঁদের গান মুছে ফেলার শিকার হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—এআই প্লেলিস্টে গান যুক্ত হওয়ার ফলে অস্বাভাবিক স্ট্রিমিং বেড়েছে, যা স্পটিফাইয়ের মতে বট ব্যবহার করে কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হয়েছে।
প্যাটারসনের গান 'আর্টেমিস' হঠাৎ করেই 'সামার বপস' নামে একটি প্লেলিস্টে যুক্ত হয়। পরদিনই প্রায় ৭০০ স্ট্রিম হয়, এরপর হঠাৎই থেমে যায়—যা প্যাটারসনের সন্দেহের জন্ম দেয়। কয়েকদিনের মধ্যেই তার ডিস্ট্রিবিউশন প্ল্যাটফর্ম সিডি বেবী তাকে জানায়, তার 'ওয়াক' অ্যালবামটি স্পটিফাই থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে কারণ সেটি "এআই স্ট্রিমিং" হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
এই প্রক্রিয়ায় শিল্পীদের পক্ষ থেকে কোনো ব্যাখ্যা বা আপিলের সুযোগ দেওয়া হয় না। স্পটিফাইয়ের যুক্তি—বট প্লেলিস্ট থেকে বাঁচতে কড়া পদক্ষেপ দরকার, কারণ প্রমাণ ছাড়া সবাইকে নির্দোষ ধরে নিলে পুরো প্ল্যাটফর্মটাই বট-স্ট্রিমে ছেয়ে যাবে। তবে শিল্পীদের অবস্থান থেকে বিষয়টি কঠিন—যখন কোনো কিছু না করেও তারা শাস্তি পাচ্ছে, অথচ তারা সেটা অস্বীকার করারও সুযোগ পাচ্ছে না
প্যাটারসন বলেন, “আমি শুধু সাবমিটহাব ব্যবহার করেছি—যেখানে মানুষ অর্থের বিনিময়ে গান শোনে ও রিভিউ দেয়। কেউ কোনো প্লেলিস্টে আমার অনুমতি ছাড়া গান দেয়, আমি এর কিছুই জানতাম না, অথচ দণ্ডটা পড়ছে আমার ওপর।”
রোজি লাটানাভং। তার মিউজিক নাম রোজি এল। তিনিও একই ঘটনার শিকার হয়েছেন তার 'প্যারাডাইজ' গান দিয়ে। হঠাৎ স্ট্রিম বেড়ে যাওয়ার পর ডিস্ট্রোকিড তাকে জানায় গানটি সরিয়ে ফেলা হবে। তাকে একটি কুইজ দিতে হয়—যেখানে সত্যিকারের প্লেলিস্ট আর বট প্লেলিস্টের পার্থক্য ব্যাখ্যা করতে হয়। এটা তার কাছে অপমানজনক লেগেছে।
১০ ডলার ফি দিয়ে একই আইসিআরসি নম্বর দিয়ে গানটি পুনরায় আপলোড করেন তিনি, কিন্তু সপ্তাহখানেকের মধ্যেই আবার সরিয়ে নেওয়া হয়। ডিস্ট্রোকিড জানায়, তিনবার এমন হলে তার পুরো ডিস্কোগ্রাফিই স্পটিফাই থেকে ব্যান হয়ে যাবে। অবশেষে তিনি নিজেই 'প্যারাডাইজ' গানটি স্পটিফাই থেকে সরিয়ে নেন।
আরেক শিল্পী দ্য ডেডলি বিলাভেড ব্যান্ডের ভোকালিস্ট জেভি বার্নাজার্ড জানান, তাদের 'ডোন্ট রানওয়ে' গানটির হঠাৎ ১,০০০ স্ট্রিম হয়, যা তার অ্যালবাম 'বেলুনস ফর মাই ফিউনেরাল'-এর অংশ। কিছুদিন পর স্পটিফাই থেকে পুরো অ্যালবামই মুছে ফেলা হয়—কোনো নোটিশ ছাড়াই। ব্যান্ডটি এখন নতুন ডিস্ট্রিবিউটরের খোঁজে, যদিও এতে বাস্তবিক কোনো পার্থক্য হবে না বলেই তারা মনে করেন।
বার্নাজার্ড বলেন, 'আমরা ঠিক করি না আমাদের গান কে কোন প্লেলিস্টে দেবে। কেউ আমাদের অনুমতি ছাড়াই গান প্লেলিস্টে দিয়েছে, আর তার খেসারত দিতে হচ্ছে আমাদের। আমরা এই অ্যালবামে ৫,০০০ ডলার খরচ করেছি। এটা আমাদের সৃজনশীল সন্তান। একে এভাবে মুছে দেওয়া খুবই নিষ্ঠুর।'
স্পটিফাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁরা ‘অটোমেটেড কাস্টমার সার্ভিস’-এর ধাক্কায় পড়েছেন—অর্থাৎ মানুষের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ নেই।
তবে আশার কথা—প্যাটারসন যখন পুনরায় তার অ্যালবাম ডিস্ট্রিবিউশনে পাঠান, তার গান আবার স্পটিফাইয়ে ফিরে আসে, আগের সব স্ট্রিমিং সংখ্যাসহ। এটি সাধারণত দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সময় নেয়।
এই ধরনের ঘটনা ডালাসের স্বাধীন সংগীতশিল্পীদের মাঝে বাড়ছে। এমনকি যারা কিছুই করেনি, তারাও শাস্তি পাচ্ছে। এআই প্লেলিস্ট ও স্ট্রিম বটের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে স্পটিফাই এমন এক বিদঘুটে পরিস্থিতি তৈরি করেছে—যেখানে কার গান কখন সরিয়ে নেওয়া হবে, কেউ জানে না। শিল্পীদের আত্মপ্রকাশ, আয়ের উৎস এবং বিশ্বাসযোগ্যতা—সবই এখন ঝুঁকির মুখে।
সোর্স: ডালাস অবজারভার