কেটি পেরি-জাস্টিন ট্রুডো: দুই জগতের তারা একই সুরে বাঁধা
এক দিকে কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী, আর অন্যজন আমেরিকার বিশ্ববিখ্যাত পপ তারকা। দুই জন আলাদা আলাদা জগতের মানুষ হলেও বর্তমানে তারা একই সঙ্গে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। বলা হচ্ছে কেটি পেরি ও জাস্টিন ট্রুডোর কথা।
এক দিকে কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী, আর অন্যজন আমেরিকার বিশ্ববিখ্যাত পপ তারকা। দুই জন আলাদা আলাদা জগতের মানুষ হলেও বর্তমানে তারা একই সঙ্গে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। বলা হচ্ছে কেটি পেরি ও জাস্টিন ট্রুডোর কথা।
গত সপ্তাহান্তে প্যারিসের বিখ্যাত ‘ক্রেজি হর্স’ ক্যাবারে থেকে হাত ধরাধরি করে বের হতে দেখা যায় জাস্টিন ট্রুডো এবং কেটি পেরিকে, যেখানে তারা পেরির ৪১তম জন্মদিন উদযাপন করছিলেন।
আলাদা জগতের মানুষ হলেও দুজনের মধ্যে অনেক মিল। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দুজনেই আলোচনায়। জনপ্রিয়তা ও সমালোচনার দোলাচলে দুলতে হয়েছে দুজনকেই। আর এই সম্পর্ক হয়তো দুজনেরই ভাবমূর্তিকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার সুযোগ দিচ্ছে।
তাদের প্রেমের গুঞ্জন শুরু জুলাইয়ের শেষ দিকে—মন্ট্রিয়লের এক অভিজাত রেস্তোরাঁয় রাতের খাবারে একসঙ্গে দেখা যায় তাদের। কয়েক দিনের মধ্যেই ট্রুডোকে দেখা যায় মঞ্চে, পেরির সঙ্গে গলা মিলিয়ে গাইছেন 'ফায়ারওয়ার্ক' এবং 'টিনেজ ড্রিম'।
এরপর ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে পেরির ইয়টে তাদের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি ভাইরাল হয়। যদিও কেউই প্রকাশ্যে সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেননি, তবে এক কনসার্টে ভক্তের বিয়ের প্রস্তাবে পেরির মজার ‘তোমার ৪৮ ঘণ্টা আগেই এই প্রস্তাব দেওয়া উচিত ছিল’ উত্তরই যেন বলে দিয়েছিল সব।
২০১৫ সালে কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় এসে ট্রুডো ছিলেন প্রগতিশীল রাজনীতির প্রতীক। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রিয়তার গ্রাফ নেমে যায়। ব্যয়বহুল ছুটি, অতীতের বিতর্কিত ছবি, আর রাজনৈতিক ক্লান্তি মিলিয়ে তাকে পদত্যাগ করতে হয় এ বছরের শুরুতে।
অন্যদিকে, কেটি পেরিও খ্যাতির উচ্চতা পেরিয়ে এসে এখন ক্যারিয়ারের কঠিন অধ্যায়ে। একসময় চার্টের শীর্ষে থাকা এই গায়িকার সাম্প্রতিক অ্যালবাম ‘১৪৩’ তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি। মহাকাশ ভ্রমণ থেকে শুরু করে প্রেমের ভাঙন—সব মিলিয়ে তার নামটিও খবরের পাতা জুড়ে ছিল, কিন্তু সবসময় ইতিবাচকভাবে নয়।
ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির যোগাযোগ বিদ্যার অধ্যাপক হোসে রদ্রিগেজ বলেন, ‘এই সম্পর্ক আসলে দুজনের জন্যই এক নতুন ব্র্যান্ডিং—অপ্রত্যাশিত কিন্তু আকর্ষণীয়। পেরির জন্য এটি রাজনীতি ও সমাজসেবামূলক জগতে প্রবেশের সেতু তৈরি করছে, আর ট্রুডোর জন্য এটি কঠোর রাজনীতির বাইরে এক মানবিক দিকের প্রতিচ্ছবি।’
কেটি ও ট্রুডোর মধ্যে শুধু রোমান্টিকতাই নয়, আদর্শগত মিলও স্পষ্ট। পেরি দীর্ঘদিন ধরেই নারীর ক্ষমতায়ন ও এলজিবিটিকিউ অধিকারের পক্ষে কাজ করে আসছেন। ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনের প্রচারণায় অংশ নেন, আর ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রকাশ্যে সমর্থন জানান কমলা হ্যারিসকে।
ট্রুডোও তার নেতৃত্বে কানাডাকে সামাজিক ন্যায্যতা, পরিবেশবাদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছেন। দুজনেই সন্তানপ্রেমী, পরিবারমুখী এবং প্রকাশ্যে মানবিক দিক দেখাতে ভয় পান না।
ট্রুডোর জীবনের এই অধ্যায় অনেককে মনে করিয়ে দিচ্ছে তার বাবা পিয়ের এলিয়ট ট্রুডোকে, যিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীনও একাধিক বিখ্যাত নারীর সঙ্গে সম্পর্কের কারণে আলোচনায় ছিলেন—তাদের মধ্যে ছিলেন গায়িকা বারবারা স্ট্রাইস্যান্ড ও অভিনেত্রী কিম ক্যাটরেল।
কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক জোনাথন ম্যালয় বলেন, ‘ইতিহাস যেন নিজেকেই পুনরাবৃত্তি করছে। কিন্তু এইবার গল্পটা হয়তো একটু অন্যরকমভাবে শেষ হবে।’
রাজনীতি থেকে সরে এসে ট্রুডো এখন নতুন জীবনের পথে হাঁটছেন—যে জীবনে তিনি নিজেকে ‘ডিভোর্সের পর নতুন জীবন শুরু করা বাবা’ হিসেবে পুনরাবিষ্কার করছেন।
এই সম্পর্ক কতটা স্থায়ী হবে, তা সময়ই বলবে। কিন্তু একথা ঠিক—কেটি পেরি ও জাস্টিন ট্রুডোর এই অপ্রত্যাশিত মিলন রাজনীতি ও বিনোদনের সীমা পেরিয়ে এক নতুন আখ্যান তৈরি করেছে। তারা এখন একে অপরের শুধু সঙ্গীই নন, নিজেদের পুনর্গঠনের যাত্রায় তারা পরস্পরের সহযাত্রীও।
তথ্যসূত্র: বিবিসি