হোয়াইট হাউস সফরে সৌদি যুবরাজকে স্বাগত জানাতে ট্রাম্পের সর্বাত্মক প্রস্তুতি
সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে (এমবিএস) স্বাগত জানাতে রাজকীয় আয়োজনে সাজছে হোয়াইট হাউস। তাকে সম্মানসূচক অভ্যর্থনা, দিনের শেষভাগে ব্ল্যাক-টাই ডিনার—সব মিলিয়ে রাষ্ট্রীয় সফরের মতো আয়োজনেই তাকে গ্রহণ করতে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে (এমবিএস) স্বাগত জানাতে রাজকীয় আয়োজনে সাজছে হোয়াইট হাউস। তাকে সম্মানসূচক অভ্যর্থনা, দিনের শেষভাগে ব্ল্যাক-টাই ডিনার—সব মিলিয়ে রাষ্ট্রীয় সফরের মতো আয়োজনেই তাকে গ্রহণ করতে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্প শুক্রবার বলেন, ‘এটা শুধু বৈঠক নয়—আমরা সৌদি আরবকে, ক্রাউন প্রিন্সকে সম্মান জানাচ্ছি।’ যদিও এমবিএস আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধান নন—তাই আসন্ন সফরটিকে কাগজে-কলমে ‘স্টেট ভিজিট’ বলা যাচ্ছে না। তার বাবা, ৮৯ বছর বয়সী বাদশা সালমানই এখনো রাষ্ট্রপ্রধান। তবু রাজ্যের দৈনন্দিন ক্ষমতা কার্যত এমবিএস–এর হাতেই। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সৌদি যুবরাজ ওয়াশিংটনে যাবেন।
সাত বছরের মধ্যে এটাই এমবিএস–এর প্রথম হোয়াইট হাউস সফর, যা ঘিরে ওয়াশিংটনে কূটনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে। ট্রাম্প আশা করছেন, এ সফর থেকেই সৌদি–ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের অগ্রগতি হবে, যা তার স্বাক্ষর ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর বড় সাফল্য হবে।
প্রিন্স সর্বশেষ ওয়াশিংটন গিয়েছিলেন ২০১৮ সালে। তার সে সফরের কিছুদিন পরই তুরস্কে সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার ঘটনা বিশ্বব্যাপী তীব্র প্রতিক্রিয়া তোলে। সিআইএ’র মূল্যায়নে এমবিএসকে এ হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হলেও তিনি তা অস্বীকার করে আসছেন।
তারপরও আমেরিকারর সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়নি। বাইডেনও ক্ষমতায় এসে শুরুর কড়া অবস্থান থেকে সরে রিয়াদ সফর করেন। সর্বশেষ আয়োজনগুলো দেখে মনে হচ্ছে—ওয়াশিংটন-রিয়াদের টানাপোড়েন আপাতত থেমে গেছে।
সৌদি যুবরাজের হোয়াইট হাউস সফর ঘিরে মঙ্গলবারের কর্মসূচিতে রয়েছে, সামরিক ব্যান্ডসহ আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা, ওভাল অফিসে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এবং সন্ধ্যায় ব্ল্যাক-টাই ডিনার।
প্রথম দফার নিমন্ত্রণপত্র এরই মধ্যে মূলত বড় কোম্পানির সিইও, আইনপ্রণেতা ও গভর্নরদের কাছে পাঠানো হয়েছে। যাদের মধ্যে কয়েকজনকে ট্রাম্প নিজেই ডিনারে আমন্ত্রণ জানাতে ফোন করেছিলেন। ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের দপ্তর ঐতিহ্য অনুযায়ী পুরো অনুষ্ঠানটি সমন্বয় করছে।
একদিন পর কেনেডি সেন্টারে যুক্তরাষ্ট্র–সৌদি বিনিয়োগ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে দুই দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা যৌথ বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে আলোচনা করবেন।
গত মে মাসে ট্রাম্প সৌদি সফরে যে অভ্যর্থনা পেয়েছিলেন—ফাইটার জেট এসকর্ট, সম্মানগার্ডের স্বর্ণখচিত তরবারি, ঘোড়সওয়ার বাহিনী—সবই ছিল নজরকাড়া। সেই সফরে সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়।
মঙ্গলবারের বৈঠকের আগে দুই দেশ নতুন সামরিক সহযোগিতা, মার্কিন যুদ্ধবিমান ও অস্ত্র কেনাসহ গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা চুক্তি চূড়ান্ত করার চেষ্টা করছে। সফরের এক সপ্তাহ আগে ওয়াশিংটনে এসেছেন সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী খালিদ বিন সালমানও।
এ সফরের বড় আলোচ্য হবে সৌদি-ইসরায়েল স্বাভাবিকীকরণ। গাজায় যুদ্ধবিরতির পর ট্রাম্প মনে করছেন, দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ খুবই কাছে। তবে প্রধান বাধা হচ্ছে—রিয়াদের দাবি অনুযায়ী স্পষ্ট ও অপরিবর্তনীয় ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রগঠনের পথনকশা এখনো প্রস্তুত নয়।
অন্যদিকে সফরের সংবেদনশীলতা আরও বেড়েছে ট্রাম্প পরিবার ও সৌদি আরবের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ঘিরে। ট্রাম্প অর্গানাইজেশন সৌদিতে বড় রিয়েল এস্টেট প্রকল্পে যুক্ত। জ্যারেড কুশনারের বিনিয়োগ তহবিলও সৌদির বিলিয়ন ডলার মূলধনে পরিচালিত হচ্ছে।
সব মিলিয়ে, বিশ্বরাজনীতির নজর এখন আবারও হোয়াইট হাউজের দিকে, যেখানে ট্রাম্প ও এমবিএসের পুনর্মিলন মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিতে নতুন অধ্যায় খুলতে পারে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন