ওবামা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্তে ট্রাম্পপন্থী প্রসিকিউটর

মায়ামির মার্কিন অ্যাটর্নি জেসন রেডিং কিনোনেসকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগে আলোচনার ঝড় উঠেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ এই প্রসিকিউটর সাবেক ওবামা প্রশাসনের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিস্তৃত তদন্ত শুরু করেছেন—যা নিয়ে ক্ষোভ, উদ্বেগ ও অস্বস্তি বাড়ছে দক্ষিণ ফ্লোরিডার আইনপ্রয়োগকারী মহলে।

Nov 17, 2025 - 12:47
ওবামা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্তে ট্রাম্পপন্থী প্রসিকিউটর
মার্কিন অ্যাটর্নি জেসন রেডিং কিনোনেস। ছবি: সংগৃহীত

মায়ামির মার্কিন অ্যাটর্নি জেসন রেডিং কিনোনেসকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগে আলোচনার ঝড় উঠেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ এই প্রসিকিউটর সাবেক ওবামা প্রশাসনের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিস্তৃত তদন্ত শুরু করেছেনযা নিয়ে ক্ষোভ, উদ্বেগ অস্বস্তি বাড়ছে দক্ষিণ ফ্লোরিডার আইনপ্রয়োগকারী মহলে।

২০১৮ সালে দক্ষিণ ফ্লোরিডার ফেডারেল প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পাওয়া রেডিং কিনোনেস শুরুতে নতুনদের ক্যাম্পেই কাজ করতেন, যেখানে সাধারণত মাদক অস্ত্র মামলায় নবীন আইনজীবীরা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। তবে কর্মদক্ষতা আইনগত বিশ্লেষণে দুর্বলতার কারণে তিনি পদোন্নতি পাননি; বরং সুপারভাইজারদের কাছ থেকে খারাপ মূল্যায়ন পান। পরে তিনি বৈষম্যের অভিযোগ তুললেও সেই অভিযোগ প্রত্যাহার করে সিভিল বিভাগে যোগ দেন এবং একপর্যায়ে কাউন্টি জজ হন।

কিন্তু ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরা পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে। প্রশাসন তাকে দক্ষিণ ফ্লোরিডার শীর্ষ প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দিলে একের পর এক অভিজ্ঞ প্রসিকিউটর পদত্যাগ করেন। সুপারভাইজরদের অভিযোগঅফিসে মনোবল ভেঙে পড়েছে, তদন্তে রাজনৈতিক আঙ্গিক ঢুকে পড়েছে, আর রেডিং কিনোনেসেরইমপার্শিয়াল জাস্টিসপ্রতিশ্রুতি পুরোনো কর্মীদের প্রতি অযাচিত সন্দেহ তৈরি করেছে।

গত কয়েক সপ্তাহে তাঁর অফিস সাবেক সিআইএ প্রধান জন ব্রেনন, সাবেক ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টর জেমস ক্ল্যাপারসহ সাবেক এফবিআই কর্মকর্তাদের উদ্দেশে একের পর এক সমন জারি করেছে। তদন্তের উদ্দেশ্য২০১৭ সালের সেই গোয়েন্দা মূল্যায়ন, যেখানে বলা হয়েছিল রাশিয়া ২০১৬ নির্বাচনে ট্রাম্পকে এগিয়ে রাখতে হস্তক্ষেপ করেছিল। প্রায় এক দশক পুরোনো এই কাজের নথি কীভাবে পাওয়া সম্ভব হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন সংশ্লিষ্টরা।

অফিসের ভেতরে চাপ-উদ্বেগ আরও বেড়েছে দুই প্রসিকিউটরের পদত্যাগের পর। তাঁরা তদন্তে যুক্ত হতে অনীহা জানালেতথ্য ফাঁসেরঅভিযোগ তুলে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক নথিতে সই করাতে চাপ দেওয়া হয়, যা তারা প্রত্যাখ্যান করেন।

রেডিং কিনোনেসের উত্থানে বড় ভূমিকা রেখেছেন রক্ষণশীল আইনজীবী অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট মাইক ডেভিস। ডেভিস প্রকাশ্যে এই তদন্তকে সমর্থন করছেন এবং বলে আসছেনট্রাম্পকেরাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তকরার অভিযোগে যারা যুক্ত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা হওয়া উচিত।

অন্যদিকে বিচার বিভাগ রেডিং কিনোনেসকে সমর্থন করে বলছে, তিনিআইনের শাসন রক্ষায় দক্ষ বিশ্বস্ত’, এবং তার অফিসগুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ দণ্ড নিশ্চিত করছে।তবে দক্ষিণ ফ্লোরিডার অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশই বলছেন, তারা এমন পরিস্থিতি আগে কখনও দেখেননিএকই অফিসে কাজ করলেও এখন সবাই ভেবে চলছেন, কোন মামলায় হাত দিলে চাকরি যাবে কি না।

তদন্তের পরবর্তী ধাপ নজর কাড়ছে আরেক কারণে: রেডিং কিনোনেসের অনুরোধে ফোর্ট পিয়ার্সে একটি গ্র্যান্ড জুরি গঠন করা হয়েছেযেখানে বিচারক হিসেবে থাকতে পারেন আইলিন ক্যানন, যিনি আগে ট্রাম্পের নথি-অপব্যবহার মামলাটি বাতিল করেছিলেন। জানুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া এই কার্যক্রম ট্রাম্প যুগের সবচেয়ে রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল তদন্তগুলোর একটি হয়ে উঠতে পারে।

তথ্যসূত্র: ওয়াশিংটন  পোস্ট