গ্রিনকার্ডধারীদের জন্য নতুন নিয়ম, অমান্যে বৈধতা বাতিল
যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিনকার্ডধারীদের জন্য নতুন কঠোর নিয়ম চালু হয়েছে। যারা বছরে এক-দুবার যুক্তরাষ্ট্রে আসেন কিন্তু সরকারি সুবিধা নেন, তাদের এখন প্রমাণ দেখাতে হবে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। না হলে বিমানবন্দরে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে পারেন, এমনকি তাদের গ্রিনকার্ড বৈধ থাকবে কি না, সেটিও প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিনকার্ডধারীদের জন্য নতুন কঠোর নিয়ম চালু হয়েছে। যারা বছরে এক-দুবার যুক্তরাষ্ট্রে আসেন কিন্তু সরকারি সুবিধা নেন, তাদের এখন প্রমাণ দেখাতে হবে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। না হলে বিমানবন্দরে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে পারেন, এমনকি তাদের গ্রিনকার্ড বৈধ থাকবে কি না, সেটিও প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বহু গ্রিনকার্ডধারী আছেন, যারা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস না করেও নানা সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছেন। তারা বছরে অল্প কয়েক সপ্তাহ থেকে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা, ইনস্যুরেন্স সুবিধা এবং অন্যান্য প্রণোদনার আওতায় পড়েন। কেউ কেউ আবার সন্তানদের লেখাপড়ার সুবিধা নিতে সন্তানদের যুক্তরাষ্ট্রে রেখে নিজেরা থাকেন অন্য দেশে। অথচ, যুক্তরাষ্ট্রে থেকে কাজ করলে তারা কর দিতেন এবং দেশের অর্থনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারতেন। কিন্তু বাস্তবে তারা কর দিচ্ছেন না, আবার সরকারি তহবিল খরচ করিয়ে চলেছেন। এই পরিস্থিতিতে সরকারের ব্যয় বহুলাংশে বেড়েছে, বিশেষত সিটি ও স্টেট পর্যায়ে।
একাধিক সূত্র জানাচ্ছে, ২০২৫ সালের ৫ জুলাই থেকে নতুন নিয়ম কার্যকর হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকালে সংশ্লিষ্ট অভিবাসন কর্মকর্তা জানতে চাইতে পারেন— গ্রিনকার্ডধারীর স্থায়ী ঠিকানা কোথায়, তার নামে কোনো বাসা বা অ্যাপার্টমেন্ট আছে কি না, না থাকলে ভাড়া নেওয়ার কোনো প্রামাণ্য দলিল আছে কি না, ইউটিলিটি বিল বা স্থানীয় ব্যাংক হিসাব রয়েছে কি না, তিনি কর ফাইল করেন কি না কিংবা কোনো ধরনের কর্মসংস্থান যুক্তরাষ্ট্রে আছে কি না। কেউ যদি দেশের বাইরে থাকেন, তাহলে তার আয় কোথা থেকে আসে, জীবনযাপন কীভাবে চলে—তাও জানতে চাওয়া হতে পারে।
এসব প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর এবং যথাযথ কাগজপত্র দেখাতে না পারলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির স্থায়ী বাসিন্দার মর্যাদা চ্যালেঞ্জ করা হতে পারে। এমনকি ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে তার প্রবেশও বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
অনেকে আছেন, যারা যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে চান না বা পারেন না। তাদের জন্য একটি বিকল্প আছে— তারা স্বেচ্ছায় তাদের গ্রিনকার্ড জমা দিতে পারেন এবং ভবিষ্যতে ভিজিট ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসা-যাওয়া করতে পারেন। তবে যারা নাগরিকত্ব পেতে আগ্রহী, তাদের অবশ্যই নিরবচ্ছিন্নভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে হবে। কারণ, নাগরিকত্ব পাওয়ার আগে পর্যন্ত সরকার প্রতিটি স্থায়ী বাসিন্দার কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করে।
বিশেষজ্ঞরা আরও পরামর্শ দিচ্ছেন, যারা এখনো যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, তারা যেন প্রমাণস্বরূপ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রাখেন। যেমন—বাসা ভাড়ার চুক্তিপত্র, ইউটিলিটি বিল, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ট্যাক্স ফাইলিং সংক্রান্ত কাগজ, ড্রাইভিং লাইসেন্স বা স্টেট আইডি, কর্মসংস্থানের প্রমাণ ইত্যাদি। এসব নথিপত্র মোবাইলে স্ক্যান কপি বা প্রিন্ট আকারে হাতে রাখা উচিত, যাতে প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে দেখানো যায়।
যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিনকার্ড পাওয়া যেমন একটি বড় সুযোগ, তেমনি এর সঙ্গে রয়েছে দায়িত্বও। সরকার এখন স্পষ্ট করে বলছে, শুধু সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে চলে গেলেই চলবে না—স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে নিয়মিত বসবাস ও অংশগ্রহণও জরুরি। যারা এই বাস্তবতা বুঝে এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছেন, তাদের উচিত অবিলম্বে নিজের অবস্থান নির্ধারণ করা। কারণ, ভবিষ্যতে হয়তো সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়টুকুও পাওয়া যাবে না।
ইমিগ্রেশন আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নিয়ম ভবিষ্যতে আরও কঠোর হবে। ফলে যারা এখনো যুক্তরাষ্ট্রে পুরোপুরি বসবাস করছেন না, তাদের উচিত দ্রুত স্থায়ীভাবে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেওয়া।