জুলাই সনদে গণ-অভ্যুত্থানে যুক্ত প্রবাসীদের স্বীকৃতি নেই: গণঅধিকার পরিষদ
বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদের স্মারকলিপিতে চার দফায় বলা হয়, জুলাই জাতীয় সনদে একটি স্বতন্ত্র অনুচ্ছেদ সংযোজন করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে প্রবাসীদের ভূমিকা ও দেশের উন্নয়নে তাদের অবদানকে স্পষ্টভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে।

গণঅধিকার পরিষদের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ মনে করে যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে প্রবাসীরা সরাসরি ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। সংগঠনটি বলছে, গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বেগবান করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স শাটডাউন কর্মসূচি, অর্থনৈতিক সহায়তা, কূটনৈতিক তৎপরতা ও নৈতিক সমর্থন। কিন্তু জুলাই জাতীয় সনদে এর স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জাতীয় সনদে প্রবাসীদের অবদান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকার ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব সংযোজনের দাবিতে স্মারকলিপি দেয় বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ। এটি গ্রহণ করেন কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার।
গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য আবু হানিফ বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে প্রবাসীদের ভূমিকা ছিল। এ ছাড়া রেমিট্যান্স পাঠানোর মাধ্যমে দেশের ক্রান্তিলগ্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তারা। তাই জুলাই সনদে তাদের স্বীকৃতি থাকা উচিত। পাশাপাশি তাদের কীভাবে আরও সম্মানিত করা যায়—এটিও সরকারের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ও সম্প্রতি সংঘটিত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে প্রবাসীরা দেশের ভেতরে চলমান গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের সঙ্গে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জুলাই জাতীয় সনদের খসড়ায় প্রবাসীদের এই ঐতিহাসিক অবদান, তাদের ভোটাধিকার ও জাতীয় রাজনৈতিক কাঠামোয় প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব প্রতিফলিত হয়নি। দেশের প্রায় দুই কোটি প্রবাসী কেবল অর্থনীতির চালিকাশক্তিই নন, বরং জাতীয় উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার অপরিহার্য অংশ। দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কাঠামো ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গঠনে তাঁদের অংশগ্রহণ ও অধিকার নিশ্চিত করা সময়ের দাবি।
বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদের স্মারকলিপিতে চার দফায় বলা হয়, জুলাই জাতীয় সনদে একটি স্বতন্ত্র অনুচ্ছেদ সংযোজন করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে প্রবাসীদের ভূমিকা ও দেশের উন্নয়নে তাদের অবদানকে স্পষ্টভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদেশে অবস্থানরত সব বাংলাদেশি নাগরিকের ভোটাধিকার কার্যকরভাবে নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া। এ ক্ষেত্রে দূতাবাসের মাধ্যমে সশরীরে ভোটদান অথবা একটি নির্ভরযোগ্য অনলাইন ভোটিং ব্যবস্থা চালু করা।
জাতীয় সংসদ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী ফোরামে প্রবাসীদের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের দাবি করেছে বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ। যা সংরক্ষিত আসন কিংবা সরাসরি নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রবাসীদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবদানকে রাজনৈতিক মর্যাদায় রূপান্তর করতে একটি বিশেষ নীতি প্রণয়ন করা, যা তাঁদের অধিকার ও সম্মানকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবে।
তাদের প্রস্তাবগুলো জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে এবং জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত করবে বলে সংগঠনটি মনে করে।
স্মারকলিপি দিতে উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ও উচ্চতর পরিষদের সদস্য ফারুক হাসান, উচ্চতর পরিষদ সদস্য আবু হানিফ, বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদের উপদেষ্টা শাকিল উজ্জামান ও বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদের মানব পাচার প্রতিরোধ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সম্পাদক মো. শাহাব উদ্দীন শিহাব, গণঅধিকার পরিষদের নেতা ওয়াসিম উদ্দীন প্রমুখ।