মালাউই ও জাম্বিয়ার পর্যটকদের ১৫,০০০ ডলার পর্যন্ত ভিসা বন্ড দিতে হবে
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে, পর্যটক ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের সময় প্রথমবারের মতো কিছু দেশের নাগরিকদের সর্বোচ্চ ১৫,০০০ ডলার পর্যন্ত বন্ড দিতে হবে। মঙ্গলবার মালাউই ও জাম্বিয়া—এই দুই আফ্রিকান দেশ প্রথমবারের মতো সেই তালিকায় স্থান পেল, যাদের নাগরিকদের ভিসা বন্ড দিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে, পর্যটক ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের সময় প্রথমবারের মতো কিছু দেশের নাগরিকদের সর্বোচ্চ ১৫,০০০ ডলার পর্যন্ত বন্ড দিতে হবে।
মঙ্গলবার মালাউই ও জাম্বিয়া—এই দুই আফ্রিকান দেশ প্রথমবারের মতো সেই তালিকায় স্থান পেল, যাদের নাগরিকদের ভিসা বন্ড দিতে হবে।
এই সপ্তাহের শুরুতেই ঘোষণা করা হয়েছে এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, যার মাধ্যমে এমন দেশগুলোর নাগরিকদের ওপর ভিসা বন্ড আরোপের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যারা যুক্তরাষ্ট্রে ভিসার মেয়াদ অতিক্রম করে দীর্ঘ সময় অবস্থান করে।
তাদেরকে ভিসা সাক্ষাৎকারের সময় ৫,০০০ ডলার থেকে ১৫,০০০ ডলার পর্যন্ত একটি পরিমাণ প্রদান করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য। তারপর যদি পর্যটক তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করেন, তবে সেই অর্থ ফেরত দেয়া হবে।
অর্থ ফেরত দেয়া হবে যদি ভিসা বাতিল হয়, যদি ভ্রমণ না করা হয় বা পর্যটককে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি না দেয়া হয়।
কিন্তু যদি কোনো পর্যটক তাদের ভিসার মেয়াদ অতিক্রম করেন—অথবা যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় চান বা অন্য কোনো অভিবাসন সংক্রান্ত প্রোগ্রামে আবেদন করেন—তাহলে ফেডারেল সরকার ওই অর্থ ধরে রাখবে।
মালাউই ও জাম্বিয়ার বাইরে আরও দেশকে এই তালিকায় যুক্ত করার কথা রয়েছে। এই বন্ডের বাধ্যবাধকতা উক্ত দুই দেশের জন্য আগামী ২০ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস মঙ্গলবার বলেছেন, 'এই লক্ষ্যভিত্তিক, যুক্তিসঙ্গত পদক্ষেপ প্রশাসনের অভিবাসন আইনের প্রতি প্রতিশ্রুতিকে শক্তিশালী করবে এবং ভিসা মেয়াদ অতিক্রম রোধ করবে।'
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদের শপথ গ্রহণের পর থেকে অভিবাসন নীতিতে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন।
তার অফিসে ফেরার প্রথম দিনেই তিনি 'আমেরিকান জনগণকে আক্রমণ থেকে রক্ষা' নামের একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসনের 'অসাধারণ ঢল'-কে নিন্দা জানানো হয়।
এই আদেশের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। পরে এই নির্বাহী আদেশ নতুন ভিসা বন্ডের ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এই বন্ড একটি পাইলট প্রোগ্রামের অংশ, যা সোমবার ঘোষণা করা হয়, এটি ১২ মাসের জন্য কার্যকর থাকবে।
ফেডারেল রেজিস্টারে জমা দেওয়া একটি নথিতে বলা হয়েছে, 'এই (অস্থায়ী চূড়ান্ত নিয়ম) ট্রাম্প প্রশাসনের আহ্বানকে সাড়া দেয়, যা আমেরিকান জনগণকে রক্ষা করতে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ করার লক্ষ্যে।'
প্রতি বছর হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (ডিএইচএস) যুক্তরাষ্ট্রে ভিসার মেয়াদ অতিক্রমের প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
২০২৪ সালে প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ লক্ষ ৬৫ হাজার বিদেশি পর্যটক ও ব্যবসায়ী তাদের ভিসার মেয়াদ অতিক্রম করেছেন—যা মোট আগমনের মাত্র ১.৪৫ শতাংশ হলেও, এটি অভিবাসন নীতিতে সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রতিবেদন ব্যাখ্যা করে, 'অর্থাৎ ৯৮.৫৫ শতাংশ অ-অভিবাসী পর্যটক সময়মতো এবং প্রবেশের শর্ত অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করেছে।'
দেশভিত্তিক ভিসা মেয়াদ অতিক্রমের হার বিবেচনায়, মালাউই ও জাম্বিয়ার হার যথাক্রমে ১৪.৩ এবং ১১.১ শতাংশ, যা অপেক্ষাকৃত বেশি।
কিন্তু মালাউই ও জাম্বিয়া ছোট দেশ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে পর্যটক বা ব্যবসায়িক আগমনের সংখ্যা কম।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ অর্থবছরে মালাউই থেকে ব্যবসা বা পর্যটনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ১,৬৫৫ জন গিয়েছিলেন, যার মধ্যে ২৩৭ জন ভিসা মেয়াদ অতিক্রম করেন।
একই সময়ে জাম্বিয়া থেকে ৩,৪৯৩ জন পর্যটন বা ব্যবসার উদ্দেশ্যে এসেছিলেন, যার মধ্যে ৩৮৮ জন ভিসা সীমা লঙ্ঘন করেছেন।
এই সংখ্যাগুলো তুলনায় অনেক ছোট, কারণ বড় দেশগুলো থেকে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘমেয়াদী অবস্থান করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ব্রাজিল থেকে আনুমানিক ২০,৮১১ জন এবং কলম্বিয়া থেকে ৪০,৮৮৪ জন ভিসা মেয়াদ অতিক্রম করেছে।
সমালোচকরা বলছেন, নতুন বন্ড আরোপের ফলে যাত্রীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ আগের চেয়ে আরও ব্যয়বহুল হয়ে যাবে, বিশেষত দরিদ্র দেশগুলোর বাসিন্দাদের জন্য।
আমেরিকা-ইসলামিক সম্পর্ক পরিষদ একটি প্রভাবশালী ওয়াকফ সংগঠন। তারা নতুন ভিসা বন্ড ব্যবস্থাকে কঠোরভাবে সমালোচনা করেছে এবং এটিকে ‘আইনের আড়ালে শোষণ’ বা ‘আইনি শেকডাউন’ হিসেবে অভিহিত করেছে
সংস্থাটির সরকারি বিষয়ক পরিচালক রবার্ট ম্যাককাও বলেছেন, 'এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য নয়। এটি অভিবাসন নীতিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে দুর্বল পর্যটকদের শোষণ করার, অপছন্দনীয় দেশগুলোর শাস্তি দেওয়ার এবং আমেরিকার স্বাগত জানানো পথকে একটি অর্থপ্রদানের প্রক্রিয়ায় পরিণত করার চেষ্টা।'
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর নাগরিকরা এই নতুন ভিসা বন্ডের আওতায় পড়বে না।
সূত্র: আল-জাজিরা