যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব আবেদনকারীদের ‘নৈতিক চরিত্র’ কঠোরভাবে যাচাই করবে ট্রাম্প প্রশাসন

ট্রাম্প প্রশাসন নাগরিকত্বের জন্য আবেদনকারীদের 'ভালো নৈতিক চরিত্র' আরও কড়াভাবে যাচাই করবে। নতুন নীতি অনুযায়ী কর্মকর্তাদের শুধু অপরাধ না থাকার বিষয় নয়, অভিবাসীর আচরণ, সামাজিক নিয়ম মেনে চলা ও ইতিবাচক অবদানও মূল্যায়ন করতে হবে।

Aug 19, 2025 - 12:28
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব আবেদনকারীদের ‘নৈতিক চরিত্র’ কঠোরভাবে যাচাই করবে ট্রাম্প প্রশাসন
  ছবি: সিবিএস নিউজ

ট্রাম্প প্রশাসন ইঙ্গিত দিচ্ছে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বের জন্য আবেদনকারী বৈধ অভিবাসীদের আবেদনগুলো আরও কঠোরভাবে পরীক্ষা করবে, যা ইউএস ইমিগ্রেশন সুবিধাগুলোর প্রবেশাধিকার সীমিত করার নতুন প্রচেষ্টার অংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (ইউএসসিআইএস) দেশের বৈধ অভিবাসন ব্যবস্থাকে তত্ত্বাবধান করে। সংস্থাটি শুক্রবার কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে যে নাগরিকত্বের জন্য আবেদনকারীদের 'ভালো নৈতিক চরিত্র' রয়েছে কি না তা নির্ধারণের সময় অতিরিক্ত কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হবে।

সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বাসিন্দা (গ্রিন কার্ডধারী), বৈধ অভিবাসীরা বা বছরের মধ্যে (প্রত্যেকের ক্ষেত্রে আলাদা) স্বাভাবিকভাবে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন। ইংরেজি নাগরিকত্ব পরীক্ষা পাশ করার পাশাপাশি 'ভালো নৈতিক চরিত্র প্রদর্শন' দীর্ঘদিন ধরে নাগরিকত্ব পাওয়ার শর্তগুলোর একটি।

কয়েক দশক ধরে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট প্রশাসনের অধীনে 'ভালো নৈতিক চরিত্র' যাচাই সাধারণত পূর্ণ হতো যদি আবেদনকারীর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইনে নির্ধারিত কোনো অপরাধ বা অযোগ্য আচরণ না থাকে। এই অযোগ্য আচরণের মধ্যে রয়েছে হত্যা, গুরুতর অপরাধ, মাদক অপরাধ এবং নিয়মিত মদ্যপানকারী হওয়া।

কিন্তু ইউএসসিআইএস শুক্রবার একটি নীতি প্রকাশ করেছে, যা 'ভালো নৈতিক চরিত্র' যাচাইকে প্রসারিত করছে। এতে বলা হয়েছে, এটি শুধু অপরাধের অনুপস্থিতি যাচাই করার জন্য একটি সাধারণ পরীক্ষা নয়। বরং কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে যে এটি অভিবাসীর আচরণ, সামাজিক নিয়ম মেনে চলা এবং ইতিবাচক অবদানসহ সামগ্রিকভাবে মূল্যায়ন করা উচিত, যা তার ভালো নৈতিক চরিত্র প্রমাণ করে।

এই নির্দেশনায় কর্মকর্তাদের আবেদনকারীর ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য অবদানের ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে কমিউনিটি কার্যক্রম, পরিবারের যত্ন নেয়া, শিক্ষা অর্জন, স্থিতিশীল আইনসম্মত চাকরি, যুক্তরাষ্ট্রে কাটানো সময় এবং কর প্রদানের কথা।

মেমোতে আরও বলা হয়েছে, সাধারণ অপরাধ এবং অযোগ্য আচরণের বাইরে যে কারণ দেখায় যে আবেদনকারীর 'ভালো নৈতিক চরিত্র' নেই, তা আরও কঠোরভাবে যাচাই করতে হবে।

নীতি অনুযায়ী, এই কারণগুলির মধ্যে রয়েছেযে কাজগুলো অভিবাসীর এলাকার সাধারণ নাগরিকদের আচরণের সাথে বৈপরীত্যপূর্ণ, এমনকি যা প্রযুক্তিগতভাবে আইনসম্মত হলেও কমিউনিটির নাগরিক দায়িত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন। ইউএসসিআইএস-এর উদাহরণে রয়েছে বিচক্ষণতাহীনতা বা নিয়মিত ট্রাফিক লঙ্ঘন, হয়রানি বা আগ্রাসী প্রশ্ন করা।

নতুন ইউএসসিআইএস নীতি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়, যারা ভুল করেছেন তারা সংশোধিত হয়েছেন তার প্রমাণ হিসেবে কিছু জিনিস বিবেচনা করতে হবে; যেমন, প্রোবেশনের শর্ত মেনে চলা, বকেয়া কর বা শিশুপরিচর্যা অর্থ প্রদান এবং কমিউনিটির সমর্থন।

ইউএসসিআইএস-এর তথ্য অনুযায়ী, গত দশকে যুক্তরাষ্ট্র বছরে প্রায় লাখ থেকে ১০ লাখ অভিবাসীকে নাগরিকত্ব প্রদান করেছে।

ইউএসসিআইএস-এর প্রধান মুখপাত্র ম্যাথিউ ট্র্যাজেসার বলেন, এই নির্দেশনা ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থার সততা পুনরুদ্ধারের একটি নতুন প্রচেষ্টা।

ট্র্যাজেসার আরও যোগ করেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব হলো নাগরিকত্বের সর্বোত্তম মানএটি শুধু সেরাদেরও সেরাদের দেয়া উচিত। আজ  ইউএসসিআইএস  নাগরিকত্ব প্রক্রিয়ায় একটি নতুন উপাদান যোগ করছে যা নিশ্চিত করবে যে নতুন নাগরিকরা শুধু মার্কিন সংস্কৃতি, ইতিহাস ভাষা গ্রহণ করবেন না, বরং ভালো নৈতিক চরিত্রও প্রদর্শন করবেন।'

ডগ ্যান্ড বাইডেন প্রশাসনের সময় ইউএসসিআইএস-এর সিনিয়র কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি মনে করেন ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি বৈধ অভিবাসীদের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে ভয় দেখানোর এবং কর্মকর্তাদেরকে আবেদন অগ্রাহ্য করার আরও কারণ খুঁজতে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে তৈরি।

্যান্ড বলেন, 'তারা 'ভালো নৈতিক চরিত্র' সংজ্ঞাকে এমনভাবে প্রসারিত করছে যাতে অতি সাধারণ বা ক্ষুদ্র আচরণকেও নাগরিকত্ব অগ্রাহ্য করার কারণ হিসেবে ধরা যায়।' উদাহরণ হিসেবে ট্রাফিক লঙ্ঘনের উল্লেখ করেন তিনি।

ট্রাম্প প্রশাসন অবৈধ অভিবাসনের ওপর কঠোর নজরদারি চালিয়েছে; যেমনদক্ষিণ সীমান্তে হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করা, দেশজুড়ে অভিযানের সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং যারা অবৈধভাবে দেশে আছে তাদের দ্রুত নির্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করা। একই সময়ে তারা বৈধ অভিবাসনকেও সীমিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে কম আলোচনার মধ্যে।

ট্রাম্প প্রশাসন শরণার্থী গ্রহণ প্রায় বন্ধ করেছে, বাইডেন যুগের বৈধভাবে অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ দেয়া প্রোগ্রামগুলো বন্ধ করেছে, কিছু দেশের ভিসা সীমিত করেছে এবং বৈধ অভিবাসন সুবিধার জন্য কঠোর যাচাই প্রক্রিয়া চালু করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বৈধ অভিবাসীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কার্যক্রমের বিস্তৃত যাচাই এবং কিছু আবেদনপত্রের কঠোর স্ক্রিনিং।

সূত্র: সিবিএস নিউজ