যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তিতে বড় ধস
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের নতুন ভর্তিতে বড় ধস নেমেছে। ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনের (আইআইই) তথ্যানুসারে, চলতি শিক্ষাবর্ষে নতুন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তির হার ১৭% কমেছে, যা কোভিড-১৯ মহামারি বাদে এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হ্রাস।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের নতুন ভর্তিতে বড় ধস নেমেছে। ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনের (আইআইই) তথ্যানুসারে, চলতি শিক্ষাবর্ষে নতুন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তির হার ১৭% কমেছে, যা কোভিড-১৯ মহামারি বাদে এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হ্রাস।
এর আগের ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি কমেছিল ৭.২%। বাইডেন প্রশাসনের শেষ সময় থেকে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুর দিকেই বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর ভিসা বাতিল, সাক্ষাৎকার স্থগিত, ডিপোর্টেশন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল কাট–ছাঁটের মতো পদক্ষেপ নেওয়ায় এই ধারা আরও তীব্র হয়েছে।
২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য জরিপে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানের ৫৭% জানায়, তাদের নতুন ভর্তি কমেছে; এর মধ্যে ২৭% প্রতিষ্ঠান বলেছে, পতনটি ‘গুরুতর’।
আইআইই বলছে, ভিসা বিলম্ব বা বাতিল—এই আশঙ্কাই এতদিন ভর্তি হ্রাসের প্রধান কারণ ছিল। গত বছর যেখানে ৮৫% প্রতিষ্ঠান ভিসা প্রক্রিয়ার জটিলতাকে দায়ী করেছিল, এবার সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৬%। যুক্তরাষ্ট্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবাঞ্ছিত বোধ করার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ (৬৭%) এবং দেশের সামগ্রিক সামাজিক–রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকা (৬৪%)—এ দুটি কারণও নতুন ভর্তি কমে যাওয়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছে বলে প্রতিষ্ঠানগুলো জানাচ্ছে।
অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল এডুকেটরসের নির্বাহী পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী ফান্তা আও বলেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বছরে ৪২.৯ বিলিয়ন ডলার যুক্ত করেন এবং ৩ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি চাকরি সমর্থন করেন। ‘ভর্তির এ শঙ্কাজনক পতন উপেক্ষা করার সুযোগ নেই’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রে মোট কলেজ শিক্ষার্থীর প্রায় ৬% বিদেশি। তবে ট্রাম্প প্রশাসন এ সংখ্যা কমাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আগস্টে হোয়াইট হাউস শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকার মেয়াদ সীমিত করার নতুন নীতি ঘোষণা করে। এর আগেও হার্ভার্ডসহ কিছু প্রতিষ্ঠানে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি পুরোপুরি বন্ধের চেষ্টা হয়েছিল, যা আদালত আটকে দিয়েছে।
অর্থনৈতিক চাপও বড় ভূমিকা রাখছে। ট্রাম্প প্রশাসন ফেডারেল তহবিল স্থগিত বা প্রত্যাহারের হুমকি দিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজেদের দাবি মানতে বাধ্য করার চেষ্টা করেছে। গত মার্চে নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ৪০০ মিলিয়ন ডলারের স্থগিত তহবিল ফেরত পেতে কয়েকটি পরিবর্তন আনতে রাজি হয়।
তবে মোট আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা গত বছর স্থিতিশীল ছিল এবং ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষে ৫% বেড়ে প্রায় ১২ লাখে পৌঁছেছে বলে আইআইই-এর ‘ওপেন ডোরস ২০২৫’ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ যুক্তরাষ্ট্রে এসেছে ভারত, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন—এ ভর্তি হ্রাস ভবিষ্যতের জন্য অশনি সংকেত। কলেজ এবং নিয়োগ সংস্থাগুলির প্রতিনিধিত্বকারী অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল এনরোলমেন্ট ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ক্লে হারমন বলছেন, ‘অনাগত বছরগুলোর জন্য সতর্কতার লক্ষণ রয়েছে। ২০২৬ এবং '২৭ সালের শরৎকালের জন্য এটি কী ইঙ্গিত দেয় তা নিয়ে আমি সত্যিই উদ্বিগ্ন।’
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান