ধ্বংসস্তূপ থেকে গাজার পুনর্গঠন কি আদৌ সম্ভব
গাজার পুনর্গঠন হবে আধুনিক যুগের অন্যতম বৃহৎ পুনর্নির্মাণ প্রকল্প। তবে প্রশ্ন থেকে যায়—কে দেবে এই বিপুল অর্থ?
ইসরায়েলের বিধ্বংসী বিমান হামলায় গাজা এখন এক বিশাল ধ্বংসস্তূপ। যুদ্ধ শুরুর ১৬ মাস পরও পুরো উপত্যকাটি যেন প্রায় মৃতপ্রায় এক অঞ্চল! ভাঙাচোরা ভবন, ধুলোমলিন রাস্তাঘাট আর ধ্বংসস্তূপের ভেতরে চাপা পড়ে থাকা হাজারো প্রাণের নিঃশব্দ হাহাকার!
জাতিসংঘের হিসেবে, গাজার পুনর্গঠন হবে আধুনিক যুগের অন্যতম বৃহৎ পুনর্নির্মাণ প্রকল্প। তবে প্রশ্ন থেকে যায়—কে দেবে এই বিপুল অর্থ?
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস–ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েল গাজায় অন্তত ৭৫ হাজার টন বোমা ফেলেছে। এতে ৬১ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি নিহত এবং আরও ১ লাখ ১০ হাজার আহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। ৫০ মিলিয়ন টনের বেশি ধ্বংসাবশেষের নিচে এখনো পড়ে আছে অগণিত মৃতদেহ।
ইউএনডিপি (জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি) জানিয়েছে, গাজা পুনর্গঠনে অন্তত ৫৩ বিলিয়ন ডলার লাগবে এবং পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে ২০৪০ সাল পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। কিন্তু সংস্থাটির অর্থনৈতিক কর্মকর্তা রামি আলাজ্জেহ বলেন, এই হিসাব কেবল আবাসন খাতের জন্য; বাস্তব ব্যয় আরও অনেক বেশি হবে।
শুধু ধ্বংসাবশেষ সরাতেই প্রয়োজন হবে প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২ সালে গাজার মোট দেশজ উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি। তাছাড়া বিপুলসংখ্যক ভবনের নিচে এখনো বিস্ফোরক ও অবিস্ফোরিত গোলা রয়ে গেছে। বোমা নিষ্ক্রিয়করণ না হলে মাটিতে ভারী যন্ত্র নামানোই সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে কাজটি অত্যন্ত জটিল ও বিপজ্জনক।
গাজার অবকাঠামো বির্নিমানের পাশাপাশি পুনর্গঠন করতে হবে মানুষের জীবনও। যুদ্ধের প্রভাবে বেকারত্ব বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০ শতাংশে। শিশুদের ১৬ মাসের শিক্ষা বন্ধ, স্বাস্থ্যসেবা কার্যত স্থবির। গত এক বছরে গাজায় ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও ত্বকের রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছাড়িয়েছে লাখেরও বেশি।
২০১৪ সালের যুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক দাতারা পুনর্গঠনে ৫.৪ বিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু এবারের যুদ্ধে ধ্বংসের মাত্রা বহু গুণ বেশি। অর্থনীতিবিদ রাজা খালিদি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে মিসর বা কাতার কোনো রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ছাড়া অর্থ দিতে রাজি হবে না।’ তাঁর মতে, দাতাদের গ্রহণযোগ্য এমন একটি প্রশাসন ছাড়া গাজায় নির্মাণ কাজ শুরু সম্ভব নয়।
তাই গাজা পুনর্গঠন এখন আর শুধু অর্থের বিষয় নয়, এটি মূলত রাজনীতির প্রশ্ন। বিশ্লেষক ড্যানিয়েল লেভি অন্তত তা-ই মনে করেন, ‘ইসরায়েল এখনো গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চাইছে।’
তারপরও আশার কথা শোনাচ্ছেন রাজা খালিদি, ‘বিদেশি অর্থ না এলেও গাজার মানুষ নিজেরাই তাদের শহর পুনর্গঠন করবে। সময় লাগবে, কিন্তু তারা তা করবেই।’
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা