‘নতুন বাংলাদেশের জন্ম’-জুলাই সনদে স্বাক্ষরের পর ইউনূস

জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হলো বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

Oct 17, 2025 - 14:53
‘নতুন বাংলাদেশের জন্ম’-জুলাই সনদে স্বাক্ষরের পর ইউনূস
জাতীয় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ

জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হলো বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক . মুহাম্মদ ইউনূস।

জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শুক্রবার বিকেলে বহু প্রতীক্ষিত জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলের নেতারা।

. ইউনূস বলেন, ‘আজ যে জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হলো, এর মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হলো। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের পরিবর্তন হবে। এর মাধ্যমে আমরা বর্বরতা থেকে সভ্যতায় আসলাম। আমরা এমন সভ্য হবো যে, মানুষ আমাদের দেখে ঈর্ষান্বিত হবে।

জুলাই সনদ স্বাক্ষরের প্রধান উপদেষ্টা অভ্যুত্থান সফলের পেছনে আত্মত্যাগকারীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

বঙ্গোপসাগর আঞ্চলিক অর্থনীতি

ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ কখনও বঙ্গোপসাগরের সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারেনি। তিনি গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘বঙ্গোপসাগর আমাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি সম্পদে ভরপুর, আমরা তার পূর্ণ ব্যবহারের লক্ষ্য নিয়েছি।

প্রধান উপদেষ্টা জানান, গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে উঠলে বিদেশি জাহাজগুলো সরাসরি বাংলাদেশে নোঙর করতে পারবেসিঙ্গাপুরের মতো অন্য বন্দরে না গিয়ে। এতে বাংলাদেশ আঞ্চলিক ট্রানজিট হাব হিসেবেও সুবিধা পাবে। কক্সবাজার, মাতারবাড়ি মহেশখালীর বন্দর উন্নয়ন করলে পুরো অঞ্চলটিকেনতুন সিঙ্গাপুর’- রূপান্তর করা সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।

ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনের অঙ্গীকার

ইউনূস বলেন, ‘আজ আমরা ঐক্যের যে সুর বাজালাম, সেটিই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে পথ দেখাবে। ঐক্যই আমাদের শক্তি।তিনি সব রাজনৈতিক দলকে উৎসবমুখর ঐতিহাসিক নির্বাচন আয়োজনের নীতি নির্ধারণে বসার আহ্বান জানান, ‘আমরা নিজেরাই সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারি, বাইরের কারও হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। এই নির্বাচন হবে এমন একটি দৃষ্টান্ত, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে।

স্বাক্ষর অংশগ্রহণ

প্রতিটি রাজনৈতিক দলের দুই প্রতিনিধি এবং কনসেনসাস কমিশনের সদস্যর, যাদের মধ্যে অধ্যাপক আলী রিয়াজও আছেনসনদে স্বাক্ষর করেন। অনুষ্ঠানে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি, এলডিপি, এনডিএম, বিজেপি খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আর জামায়াতের পক্ষে ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তবে এনসিপি, সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্কসবাদী) জাসদ অংশ নেয়নি।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

সংঘাত নিরাপত্তা পরিস্থিতি

এর আগে দুপুরে মানিক মিয়া এভিনিউতেজুলাই ফাইটার্সব্যানারে সমবেত বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে। দুপক্ষের সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হন, ভাঙচুর হয় পুলিশ গাড়ি অস্থায়ী কন্ট্রোল রুম।

ঐতিহাসিক মুহূর্তে ঐক্যের আহ্বান

এর আগের দিন জাতিকে উদ্দেশ করে ইউনূস বলেন, ‘আপনি যেখানে আছেনবাড়িতে, কারখানায়, দোকানে বা মাঠেসবাই এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের অংশ হোন। মত, ধর্ম, জাতিগত পার্থক্য ভুলে আমরা এক জাতি হিসেবে একত্রিত হবো।

জুলাই জাতীয় সনদ মূলত জুলাই আন্দোললন-পরবর্তী সংস্কার কাঠামোর নীতিগত রূপরেখা, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছানোর প্রত্যাশা করছে।

জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ইউনূস বলেন, ‘জাতি আজ এক নবজন্মের মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছে। এই ঐতিহাসিক পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে জনগণের, বিশেষ করে ছাত্রসমাজের অভ্যুত্থানের কারণে।

ঐক্য উন্নয়নের আহ্বান

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেক আলোচনার পর আমরা এই সনদে পৌঁছেছিএটি আমাদের জন্য নতুন সূচনা। সবাই এক হয়ে কাজ করতে পারলে দেশের সব সম্পদ কাজে লাগিয়ে উন্নত রাষ্ট্র গড়া সম্ভব।তিনি বলেন, ‘আমাদের সমুদ্র সম্পদ অন্যরা নিয়ে যাচ্ছেএটা হতে দেওয়া যায় না। ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা তা রক্ষা করব। কক্সবাজারকেন্দ্রিক উন্নয়নের মাধ্যমে সেখানে একটিনতুন সিঙ্গাপুরগড়ে তোলা সম্ভব।

সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি

নির্বাচন প্রসঙ্গে ইউনূস বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে এমন একটি সুষ্ঠু উৎসবমুখর নির্বাচন করব, যাতে দেশ-বিদেশের সবাই প্রশংসা করে। নির্বাচনের পথ বের করতে সব দলকে একসঙ্গে বসতে হবে।

দেশের জনগনের ঐক্যের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন,‘ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ আমাদের ধাক্কা দিতে পারবে না। এই ঐক্যই হবে নতুন বাংলাদেশের শক্তি।

তথ্যসূত্র: টিবিএস