ডাকসু নির্বাচনে সেনা মোতায়েন নিয়ে বিতর্ক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভোটের দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে সেনাবাহিনীকে ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে মোতায়েনের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থী ও প্রার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি নজিরবিহীন, এমনকি সামরিক শাসনামলেও ডাকসু নির্বাচনে সেনা নামানো হয়নি।

Aug 27, 2025 - 23:58
ডাকসু নির্বাচনে সেনা মোতায়েন নিয়ে বিতর্ক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভোটের দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে সেনাবাহিনীকেস্ট্রাইকিং ফোর্সহিসেবে মোতায়েনের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থী প্রার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি নজিরবিহীন, এমনকি সামরিক শাসনামলেও ডাকসু নির্বাচনে সেনা নামানো হয়নি।

ভিপি পদপ্রার্থী উমামা ফাতেমা মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনের জন্য সেনা মোতায়েন করা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, “এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লজ্জাজনক। একই অভিযোগ তুলেছেন আরেক ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েমও। তার মতে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা না করেই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা প্রার্থীদের জন্য বিস্ময়কর অযৌক্তিক।”

ডাকসুর সাবেক ভিপি নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, “সামরিক শাসনামলেও ডাকসু নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের নজির নেই। তিনি মনে করিয়ে দেন, সেই সময় পুলিশকেও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেওয়া হতো না।“ আশির দশকের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুশতাক হোসেনও মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব প্রশাসনেরই। তার মতে, বর্তমানে এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি যাতে সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন হতে পারে, বরং এতে অঘটনের ঝুঁকি বাড়বে।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থেই সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, “শিক্ষার্থীরা আগেও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন, আর সে কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।“ তবে তিনি আশ্বস্ত করেছেন যে, শিক্ষার্থীরা যদি না চান, তাহলে প্রশাসন সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ডাকসু নির্বাচনে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। প্রথম স্তরে থাকবেন বিএনসিসি সদস্য প্রক্টরিয়াল টিম, দ্বিতীয় স্তরে পুলিশ বাহিনী এবং তৃতীয় স্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখগুলোতে সেনা সদস্যরা অবস্থান করবেন। প্রয়োজনে সেনারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করবে এবং ভোট শেষে ফলাফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র কর্ডন করে রাখবে।

এ ছাড়া, আবাসিক হলে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে, নির্বাচনের দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রোরেল স্টেশন বন্ধ থাকবে এবং ক্যাম্পাস পুরোপুরি সিলগালা থাকবে। শুধুমাত্র বৈধ শিক্ষার্থী, অনুমোদিত সাংবাদিক নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্তরা প্রবেশাধিকার পাবেন। ক্যাম্পাসের বাইরের ভোটারদের জন্য অতিরিক্ত বাসের ব্যবস্থাও করা হবে।

তবে এসব আশ্বাস সত্ত্বেও প্রার্থীরা বলছেন, আলাপ-আলোচনা ছাড়া সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিক চর্চার পরিপন্থী। তারা দাবি করেছেন, দ্রুত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। আগামী সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।