হামাস না চাইলেও শান্তি পরিকল্পনা কার্যকর করতে পারেন ট্রাম্প

বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা তো বটেই, পশ্চিমা দেশগুলোর সরকারি কর্মকর্তা্ও গত দুই বছরে একাধিকবার যুদ্ধ শেষ হওয়ার আশা করে হতাশ হয়েছেন। তবে গত কয়েক দিনে সেই চিত্র কিছুটা বদলেছে।

Oct 5, 2025 - 00:12
হামাস না চাইলেও শান্তি পরিকল্পনা কার্যকর করতে পারেন ট্রাম্প
তাহলে গাজায় এবার শান্তি ফিরবে? ছবি: সংগৃহীত

বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা তো বটেই, পশ্চিমা দেশগুলোর সরকারি কর্মকর্তা্ও গত দুই বছরে একাধিকবার যুদ্ধ শেষ হওয়ার আশা করে হতাশ হয়েছেন। তবে গত কয়েক দিনে সেই চিত্র কিছুটা বদলেছে।         

ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা শান্তি প্রস্তাবের মূল দিকগুলো প্রকাশ পাওয়ার পর একটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে। শুক্রবার হামাস জানিয়েছে যে, তারা অবশিষ্ট ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দিতে প্রস্তুত, যদিও পরিকল্পনার অন্যান্য অংশ নিয়ে আলোচনা করতে চায় তারা। এই ঘোষণার পর আশাবাদ আরও বেড়েছে।

সরকারি কর্মকর্তা, বিশ্লেষক এবং মধ্যপ্রাচ্য পর্যবেক্ষকদের মতে, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনার সফল হওয়ার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কেউই উচ্ছ্বাসে ভাসছেন না। কারণ, এটা মধ্যপ্রাচ্যযেখানে দুই মূল খেলোয়াড়, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাস, উভয়েরই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার প্রণোদনা আছে।

ট্রাম্প আগে হামাসকে সতর্ক করেছিলেন, যে তারা যদি শান্তি প্রস্তাব না মেনে নেয়, তাহলে ‘নরক নেমে আসবে। হামাস শুক্রবার জিম্মিদের মুক্তির প্রস্তাব দেওয়ার পর ট্রাম্প সুর নরম করেছেন এবং ইসরায়েলকে উদ্দেশ্য করে সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে হবে, যাতে আমরা জিম্মিদের নিরাপদে দ্রুত বের করে আনতে পারি!’

আর এতে ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনার কাঠামো বিষয়বস্তু ট্রাম্পের বিরোধীদেরও কিছুটা আশাবাদী করে তুলেছে। গাজার ফিলিস্তিনিদের মতো বিশ্বের অনেক মানুষ, এমনকি অভিজ্ঞ কূটনীতিকরাও গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হোক।

ওবামা প্রশাসনের মানবাধিকার বিষয়ক সাবেক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী টম মালিনোভস্কি বলেন,
এই চুক্তি অন্তত এখনই বেসামরিক হত্যাযজ্ঞ থামাতে পারবে এবং অবশিষ্ট ইসরায়েলি জিম্মিদের উদ্ধার করবে- এটাই খুশির বিষয়। যুদ্ধটিকে শেষ করার সম্ভাবনাও এতে আছে।’

মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আশাবাদ বাড়ার আরেক কারণ হলো ট্রাম্পের ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পেতে চান। কিন্তু এর বাইরেও তিনি নিজেই থাকবেনবোর্ড অব পিস’-এর চেয়ারম্যান, যা এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন তদারকি করবে। যদিও কারিগরি কাজ অন্যদের হাতে থাকবে, এমন সম্ভাব্য আলোচিত ভূমিকা ট্রাম্পের অহমকে উজ্জীবিত করবে এবং তাকে পরিকল্পনার বাস্তবায়নে মনোযোগী রাখবে।

বর্তমান সাবেক অনেক মার্কিন কর্মকর্তার ধারণা, ভবিষ্যতে গাজা পুনর্গঠনের ব্যবসায়িক সুফল ট্রাম্প বা তার পরিবারের কাছে যেতে পারে। এমন সম্ভাবনাও ট্রাম্পকে উভয় পক্ষের ওপর চাপ বজায় রাখতে উৎসাহিত করছে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজাকে পুনর্গঠন অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করার জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করা কথা বলা হয়েছে, যেখানে মধ্যপ্রাচ্যের আধুনিক শহর নির্মাণে অবদান রাখা বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ততা থাকবে। ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার, যিনি ওই অঞ্চলে বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ অংশীদারিত্বে যুক্ত, তিনিই পরিকল্পনার অন্যতম রচয়িতা।

সাবেক বাইডেন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা নিজের নাম প্রকাশ না করে বলেন বলেন, ‘এই চুক্তির সম্ভাবনা এত বেশি যে ট্রাম্প হয়তো আক্ষরিক অর্থেই এতে বিনিয়োগ করবেন।

অনেকে এটিকেসরকারি দুর্নীতিহিসেবে দেখলেও, গাজায় ৬৫ হাজারেরও বেশি প্রাণহানির পর এবং ইসরায়েলি জিম্মি সৈন্যদের পরিবারের দুঃখের পর, কিছু মার্কিন কর্মকর্তা ট্রাম্পের লেনদেনভিত্তিক মানসিকতাকে ব্যবহার করতেও প্রস্তুত।

ট্রাম্প তার আগের অনড় অবস্থান থেকে সরে এসেছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। আগে তিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে নির্বাসিত করে অঞ্চলটিকে যুক্তরাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত রিসোর্ট বানানোর। তার এই পরিকল্পনা প্রবল সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। তবে সর্বশেষ প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনিরা গাজাতেই থেকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হতে পারবেন।

আরও একটি ইতিবাচক দিক হলো পরিকল্পনার আন্তর্জাতিক রূপ। ট্রাম্প সাধারণতআমেরিকাই প্রথম’ নীতিতে বিশ্বাসী। কিন্তু এবার এই পরিকল্পনায় অন্যান্য দেশগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে নেতানিয়াহু বা হামাসের এককভাবে শর্ত অমান্য করা কঠিন হবে।

প্রস্তাব অনুযায়ী, গাজার জন্য ভবিষ্যতে একটি টেকনোক্র্যাট প্রশাসন গঠন করা হবে, যেখানে ফিলিস্তিনি অন্যান্য দেশের বিশেষজ্ঞরা থাকবেন। এই প্রশাসনবোর্ড অব পিস’-এর অধীনে কাজ করবে এবং এই বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন ট্রাম্প। অন্যান্য রাষ্ট্রপ্রধানও এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

পলিটিকো সাময়িকী অবলম্বনে।