ট্রাম্প–শি বৈঠকে শুল্ক কমাল যুক্তরাষ্ট্র, বিরল খনিজ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ স্থগিত করল চীন
দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত এক ঘণ্টা ৪০ মিনিটের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাণিজ্য, ফেন্টানিল ও বিরল খনিজ রপ্তানি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত এক ঘণ্টা ৪০ মিনিটের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাণিজ্য, ফেন্টানিল ও বিরল খনিজ রপ্তানি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, শি ফেন্টানিল নিয়ন্ত্রণে কড়া পদক্ষেপ নিতে রাজি হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র চীনা ফেন্টানিলের ওপর শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়েছে। সিদ্ধান্তটি তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হচ্ছে।
বৈঠকের পর ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি ছিল অসাধারণ এক আলোচনা—এক থেকে দশের মধ্যে আমি একে ১২ দেব।’ তিনি জানান, বড় কোনো বাধা না থাকলে একটি ব্যাপক বাণিজ্যচুক্তি শিগগিরই সম্পন্ন হতে পারে। ট্রাম্প আগামী এপ্রিল মাসে চীন সফর করবেন এবং এরপর শি যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
শি জিনপিং বলেন, দুই দেশের উচিত সব স্তরে যোগাযোগ বজায় রাখা, যাতে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের ‘অসহনীয় চক্রে’ না পড়তে হয়। চীনও আপাতত বিরল খনিজ রপ্তানিতে নতুন কোনো নিয়ন্ত্রণ আরোপ স্থগিত রাখছে।
দুই নেতার এই বৈঠক ছিল ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফেরার পর প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ। তিন দেশের এশিয়া সফরের চূড়ান্ত পর্বে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ট্রাম্প সফরের সময় মালয়েশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে নতুন বাণিজ্যচুক্তি স্বাক্ষর করেছেন এবং বিনিয়োগ সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়েছেন।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, অন্যান্য বাণিজ্যশুল্ক এখনো বহাল রয়েছে এবং জনপ্রিয় অ্যাপ টিকটকের ভবিষ্যৎ নিয়েও কোনো সমাধান হয়নি। ট্রাম্প পূর্বে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, এ বিষয়ে শির সঙ্গে চুক্তি হতে পারে।
বৈঠকের আগে ট্রাম্প শিকে ‘দীর্ঘদিনের বন্ধু’ ও ‘কঠিন দরকষাকষির মানুষ’ হিসেবে বর্ণনা করেন। শি স্বীকার করেন, দুই দেশের মধ্যে ‘বিভিন্ন জাতীয় অবস্থানের কারণে’ মতপার্থক্য থাকাটা স্বাভাবিক।
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানান, মালয়েশিয়ায় উভয়পক্ষ একটি কাঠামো তৈরি করেছে যেখানে শুল্ক, বাণিজ্য, ফেন্টানিল, বিরল খনিজ ও যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য কেনার বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাঁর মতে, ট্রাম্পের অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি চীনকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এখন একে অপরের অবস্থান যাচাই করছে। ফেন্টানিল ও বাজারে প্রবেশাধিকার নিয়ে ওয়াশিংটন চাপ বাড়ালেও বেইজিং এখনো ধীর কৌশলেই এগোচ্ছে। তবু উভয় দেশই চাইছে উত্তেজনা কিছুটা কমিয়ে ইতিবাচক বার্তা দিতে।
হংকং সিটি ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ জেং জিংহান বলেন, ‘একটি সাময়িক বোঝাপড়ায় পৌঁছানো সম্ভব, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সমাধান এখনই হবে না।’
ট্রাম্প বলছেন, ‘কখনো কখনো সবাই যে পথে যায়, তার উল্টো পথে গিয়েই সাফল্য আসে।’ তাঁর এই বক্তব্যই ইঙ্গিত দেয়—ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের সম্পর্ক এখন বাস্তববাদী সমঝোতার নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করছে।
তথ্যসূত্র: এনবিসি