বিলুপ্তির মুখে অ্যামাজনের মাসকো পিরোর ‘ভাইয়েরা’
পেরুর অ্যামাজন জঙ্গলের এক প্রান্তে গাছ কাটার কাজে ব্যস্ত ছিলেন টমাস আঞ্জ ডস সান্তোস। হঠাৎ ঝোপঝাড়ের ভেতর পায়ের শব্দ শুনে থমকে গেলেন। ঘুরে দেখেন—তীর তাক করে রাখা এক আদিবাসী। ভয়ে দৌড় শুরু করেন তিনি।
পেরুর অ্যামাজন জঙ্গলের এক প্রান্তে গাছ কাটার কাজে ব্যস্ত ছিলেন টমাস আঞ্জ ডস সান্তোস। হঠাৎ ঝোপঝাড়ের ভেতর পায়ের শব্দ শুনে থমকে গেলেন। ঘুরে দেখেন—তীর তাক করে রাখা এক আদিবাসী। ভয়ে দৌড় শুরু করেন তিনি।
সেদিন তিনি মুখোমুখি হয়েছিলেন মাসকো পিরো উপজাতির। শতাধিক বছর ধরে বিশ্বের সঙ্গে সব যোগাযোগ এড়িয়ে এই উপজাতি বনে বনে ঘুরে বেড়ায়—তাদের অস্ত্র ধনুক-তীর, খাদ্য আসে বন থেকেই। টমাসের গ্রাম নুয়েভা ওসিয়ানার পাশেই তারা বাস করে।
মানবাধিকার সংস্থা সারভাইভাল ইন্টারন্যাশনাল বলছে, পৃথিবীতে এখনো বাইরের বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ নেই এমন অন্তত ১৯৬টি জনগোষ্ঠী উপজাতি টিকে আছে। এদেরই সবচেয়ে বড় উপজাতি হলো মাসকো পিরো। সংস্থাটির আশঙ্কা, আগামী এক দশকে সরকারগুলো পদক্ষেপ না নিলে এদের অর্ধেক বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। কাঠ ও খনিজ উত্তোলন, তেল অনুসন্ধান, এমনকি মিশনারি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব—সবই তাদের টিকে থাকার জন্য হুমকি।
নুয়েভা ওসিয়ানা নদীর ধারে সাত-আট পরিবারের ছোট্ট এক গ্রাম, যারা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। এখানকার বাসিন্দারা বনবাসী ভাইদের ভয় পায়, আবার তাদের জন্য সহানুভূতিও বোধ করে। তবে বাইরের বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ নেই এমন উপাজাতির মানুষদের তাদের মতোই থাকতে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন টমাস, ‘ওরা যেমন আছে, তেমনই থাকতে দাও। তাদের সংস্কৃতি বদলানোর অধিকার আমাদের নেই।’
কিন্তু সমস্যা হলো দিনকে দিন উজাড় হয়ে যাচ্ছে বন। কাঠকাটা শ্রমিকেরা তো কাঠ গাছ কাটছেই, বড় বড় কোম্পানি গুলোরও চোখ পড়েছে জঙ্গলে। যার ফলে মাসকো পিরোদের জীবন ও পরিবেশ ক্রমেই বিপন্ন হচ্ছে।
২০১৬ সালে সরকার এই অঞ্চলকে সুরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণা করার খসড়া আইন পাস করেছিল, কিন্তু সেটি আজও কার্যকর হয়নি। ফলে মাসকো পিরোরা এখন বাস্তুচ্যুতির দ্বারপ্রান্তে।
মানু নদীর তীরে পেরুর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং আদিবাসীদের অধিকার সুরক্ষা সংগঠন ফেনামাদ এখানে ‘নোমোল কন্ট্রোল পোস্ট’ পরিচালনা করে, যেখানে আটজন এজেন্ট কর্মরত। তাদের কাজ মাসকো পিরোসহ বাইরের জগত থেকে বিচ্ছিন্ন উপজাতির সাথে যোগাযোগ রক্ষা ও নিরাপত্তা দেখভাল করে। মাসকো পিরোদের কেউ কেউ মাঝে মধ্যেই এখানে আসে—কখনো ফল বা কচু চায়, কখনো শুধু কথা বলতে। ‘ওরা আমাদের ভাই, কিন্তু আমাদের জগতে আসতে চায় না।’বললেন ‘নোমোল কন্ট্রোল পোস্ট’-এর প্রধান আন্তোনিও ট্রিগোসো।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মাসকো পিরোরা উনিশ শতকের শেষ দিকে রাবার ব্যবসায়ীদের সহিংসতা থেকে পালিয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকেই তাদের এই বিচ্ছিন্ন জীবন শুরু।
আজও তারা সভ্যতার হাতছানির বাইরে থাকতে চায়। তারা শুধু নিজেদের মতো করে শান্তিতে বাঁচতে চায়। কিন্তু যেভাবে বন উজাড় হচ্ছে, তাতে তাদের নিজেদের মতো করে বাঁচার নিশ্চয়তা দেবে কে?
বিবিসি অবলম্বনে