ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জরুরি সম্মেলনে বাংলাদেশ
ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ‘সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ’ ঘোষণার লক্ষ্যে আগামী সপ্তাহে কলম্বিয়ার বোগোটায় ২০টিরও বেশি দেশ বৈঠকে বসছে। ৫-১৬ জুলাই এই ‘জরুরি শীর্ষ সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হবে। হেগ গ্রুপের সহসভাপতি হিসেবে কলম্বিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা যৌথভাবে এর আয়োজন করছে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ সম্মেলনে বাংলাদেশেরও প্রতিনিধি পাঠানোর কথা রয়েছে।

ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ‘সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ’ ঘোষণার লক্ষ্যে আগামী সপ্তাহে কলম্বিয়ার বোগোটায় ২০টিরও বেশি দেশ বৈঠকে বসছে। ৫-১৬ জুলাই এই ‘জরুরি শীর্ষ সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হবে। হেগ গ্রুপের সহসভাপতি হিসেবে কলম্বিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা যৌথভাবে এর আয়োজন করছে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ সম্মেলনে বাংলাদেশেরও প্রতিনিধি পাঠানোর কথা রয়েছে।
ইসরায়েল ও তার শক্তিশালী মিত্রদের দ্বারা সৃষ্ট ‘দায়মুক্তির পরিবেশ’মোকাবিলায় কূটনৈতিক ও আইনি পদক্ষেপ সমন্বয় করাই এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য।
হেগ গ্রুপ বর্তমানে আটটি রাষ্ট্রের একটি জোট, এটি গত ৩১ জানুয়ারি নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে গঠিত হয়। আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ইসরায়েলকে জবাবদিহি করার লক্ষ্য নিয়ে এটি গঠিত হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা মন্ত্রী রোল্যান্ড লামোলা বলেন, ‘জানুয়ারিতে দ্য হেগ গ্রুপ গঠিত হওয়া ছিল একটি মোড় ঘোরানো ঘটনা। এটি বিশ্বব্যাপী বিশেষ সুবিধাভোগের সংস্কৃতি ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি অবমাননার বিরুদ্ধে একটি দৃঢ় প্রতিক্রিয়া হিসেবে হাজির হয়েছে।’
তিনি যোগ করেন, ‘একই মনোভাব থেকে বোগোটার এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে উপস্থিত রাষ্ট্রগুলো একটি স্পষ্ট বার্তা দেবে—কোনো দেশ আইনের ঊর্ধ্বে নয় এবং সব অপরাধকেই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’
হেগ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে—বলিভিয়া, কলম্বিয়া, কিউবা, হন্ডুরাস, মালয়েশিয়া, নামিবিয়া, সেনেগাল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। এই সম্মেলনে বাংলাদেশ, আলজেরিয়া, বলিভিয়া, ব্রাজিল, চিলি, চীন, কিউবা, জিবুতি, হন্ডুরাস, ইন্দোনেশিয়া, আয়ারল্যান্ড, লেবানন, মালয়েশিয়া, নামিবিয়া, নিকারাগুয়া, ওমান, পর্তুগাল, স্পেন, কাতার, তুরস্ক, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইনস, উরুগুয়ে এবং ফিলিস্তিনসহ আরও অনেক দেশ অংশ নেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন—ফিলিস্তিনের জন্য জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার ফ্রান্সেসকা আলবানিজ; ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থার প্রধান ফিলিপ লাজারিনি; স্বাস্থ্যের অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক তলালং মোফোকেনগ; নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে বৈষম্য বিষয়ক জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপের চেয়ার লরা নাইরিনকিন্দি; এবং জাতিসংঘের ভাড়াটে সৈনিক ওয়ার্কিং গ্রুপের ম্যান্ডেট হোল্ডার আন্দ্রেস ম্যাকিয়াস তোলোসা।
ইসরায়েল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ৫৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে এবং প্রায় পুরো জনসংখ্যাকে বাস্তুচ্যুত করেছে। এই আগ্রাসন ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকাকে প্রায় বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছে এবং ২০ লাখ মানুষকে দুর্ভিক্ষের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
কলম্বিয়ার বহুপক্ষীয় বিষয়ক উপমন্ত্রী মাউরিসিও জারামিলো জাসির বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা আমাদের সামগ্রিক বহুপক্ষীয় ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে হুমকির মুখে ফেলেছে। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এমন কিছু সুনির্দিষ্ট আইনি, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণে কাজ করব, যার মাধ্যমে ইসরায়েলের হাতে ফিলিস্তিনিদের ধ্বংসযজ্ঞ দ্রুত থামানো যাবে।
বর্ণবাদ ও জাতিগত নির্মূলের এ ঘটনায় কলম্বিয়া নির্লিপ্ত থাকতে পারে না জানিয়ে জারামিলো জাসির বলেন, ‘বোগোটায় উপস্থিত দেশগুলো গণহত্যার বিরুদ্ধে শুধু আমাদের প্রতিরোধের অঙ্গীকারই পুনর্ব্যক্ত করবে না; বরং মুখের কথা থেকে যৌথ কর্মপরিকল্পনায় যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ গ্রহণেরও উদ্যোগ নেবে।’
হেগ গ্রুপের সদস্যরা গত ২০ মাসে আন্তর্জাতিক আইন রক্ষা ও প্রয়োগের জন্য ইতিমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণ আফ্রিকা গাজায় গণহত্যা কনভেনশনের কথিত লঙ্ঘনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি যুগান্তকারী মামলা করেছে। এই জোটের বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র পরে দক্ষিণ আফ্রিকার আইসিজে মামলায় যোগ দিয়েছে, যার মধ্যে বলিভিয়া, কলম্বিয়া এবং নামিবিয়া উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া, নামিবিয়া এবং মালয়েশিয়া ইসরায়েলে অস্ত্র বহনকারী জাহাজগুলোকে তাদের বন্দরে ভিড়তে বাধা দিয়েছে, অন্যদিকে কলম্বিয়া ইসরায়েলি সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।
সোর্স: মিডল ইস্ট আই