গাজা যুদ্ধ থামার কার্যকর নিশ্চয়তা চায় হামাস
গাজা যুদ্ধ শেষ এবং ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে হামাস ও ইসরায়েলের পরোক্ষ আলোচনা দ্বিতীয় দিনে শেষ হয়েছে মিশরের শারম আল শেখে।
গাজা যুদ্ধ শেষ এবং ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে হামাস ও ইসরায়েলের পরোক্ষ আলোচনার দ্বিতীয় দিন শেষ হয়েছে মিশরের শারম আল শেখে।
আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হামাসের এক সিনিয়ার কর্মকর্তা বলেন, তারা ধাপে ধাপে ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি দিতে চায়, যা গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। তিনি জানান, মঙ্গলবারের আলোচনায় বন্দিমুক্তির সময়সূচি ও ইসরায়েলি বাহিনীর প্রত্যাহার রূপরেখা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। হামাসের দাবি, শেষ ইসরায়েলি বন্দিমুক্তির সময়ই চূড়ান্তভাবে সেনা প্রত্যাহার হতে হবে।
হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তা ফাওজি বারহুম বলেন, তাদের প্রধান লক্ষ্য যুদ্ধের অবসান ও ‘দখলদার বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার’। তবে ট্রাম্পের পরিকল্পনায় সেনা প্রত্যাহারের সময়সূচি নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, হামাস হাতে থাকা ৪৮ ইসরায়েলি বন্দি ফেরানোর পর ধাপে ধাপে সেনা প্রত্যাহার শুরু হবে।
হামাসের শীর্ষ আলোচক খালিল আল-হায়া মিসরের রাষ্ট্রীয়মাধ্যম আল কাহেরা নিউজকে বলেন, ‘আমরা দখলদারদের এক মুহূর্তের জন্যও বিশ্বাস করি না।’ তিনি ইসরায়েলের প্রতি অবিশ্বাসের কথা জানিয়ে বলেন, হামাস এমন ‘বাস্তব নিশ্চয়তা’ চায় যাতে যুদ্ধ একবার শেষ হলে তা পুনরায় শুরু না হয়।
এদিকে যুদ্ধের দ্বিতীয় বার্ষিকীতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এটি আমাদের অস্তিত্ব ও ভবিষ্যতের জন্য লড়াই।’ তিনি জানান, ইসরায়েল যুদ্ধের লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে যাবে। তাদের লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে সব বন্দির মুক্তি, হামাসের শাসন কাঠামো বিলোপ, এবং গাজাকে ইসরায়েলের জন্য আর কখনও হুমকি না হতে দেওয়া।
যদিও দুই পক্ষের মধ্যে এখনও মতপার্থক্য রয়ে গেছে, মিশরের আলোচনাগুলোকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় এগোচ্ছে এই প্রক্রিয়া। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি জানান, মধ্যস্থতাকারীরা ‘স্থিতিস্থাপক অবস্থানে থেকে আলোচনা এগিয়ে নিচ্ছেন।’
তিনি বলেন, কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল থানি বুধবার মিসরে অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীর সঙ্গে যোগ দেবেন, যার মধ্যে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ ও জ্যারেড কুশনার।
তবে চুক্তি হলেও প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে—গাজা কে শাসন করবে এবং ধ্বংসস্তূপ থেকে অঞ্চলটি পুনর্গঠন করবে কে। ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু উভয়েই হামাসকে ভবিষ্যৎ প্রশাসন থেকে বাদ দিয়েছেন। ট্রাম্পের পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে একটি ‘বোর্ড অব পিস’ গঠন করা হবে, যার অধীনে ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটরা গাজার দৈনন্দিন প্রশাসন চালাবেন। এই বোর্ডের নেতৃত্বে থাকবেন ট্রাম্প নিজে এবং সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার।
অন্যদিকে হামাস জানিয়েছে, তারা যুদ্ধ-পরবর্তী প্রশাসনে অংশ নেবে না, তবে ফিলিস্তিনি জাতীয় সংস্থার তত্ত্বাবধানে অবিলম্বে পুনর্গঠনের কাজ শুরু করতে চায়।
আলোচনার মাঝেও ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। গাজা সিটির সাবরা ও তাল আল-হাওয়া এলাকায় মঙ্গলবার ড্রোন ও যুদ্ধবিমানের আক্রমণে অন্তত ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা। এ নিয়ে দুই বছরে গাজায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৬ হাজার ৬০০।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংঘর্ষ পর্যবেক্ষক সংস্থা এসিএলইডি জানিয়েছে, যুদ্ধের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ১১ হাজারের বেশি বিমান ও ড্রোন হামলা এবং ৬ হাজারের বেশি গোলাবর্ষণ ঘটেছে। গাজায় নিহতের সংখ্যা গত দুই বছরে বিশ্বের সব সংঘর্ষে মোট মৃত্যুর প্রায় ১৪ শতাংশ। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৭০১ জন চিকিৎসাকর্মী নিহত হয়েছেন।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা