শীর্ষ চার ধনীর হাতেই বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ৪ মিডিয়া
বিশ্বের চার শীর্ষ ধনী এখন এমন সব প্রতিষ্ঠানের মালিক বা প্রধান বিনিয়োগকারী, যা বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের মতামত ও সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে।
ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ারস ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন ইলন মাস্ক , ল্যারি এলিসন , মার্ক জাকারবার্গ ও জেফ বেজোস। আর ফোর্বস ম্যাগাজিনের ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ চার ধনীও হলেন তারাই। ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী ইলন মাস্ক, মার্ক জাকারবার্গ, জেফ বেজোস ও ল্যারি এলিসনের সম্পদের পরিমান যথাক্রমে ৩৪২ বিলিয়ন, ২১৬ বিলিয়ন ডলার, ২১৫ বিলিয়ন ডলার ও ১৯২ বিলিয়ন ডলার।
বিশ্বের চার শীর্ষ ধনী এখন এমন সব প্রতিষ্ঠানের মালিক বা প্রধান বিনিয়োগকারী, যা বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের মতামত ও সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে। বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী তথ্যমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে তাদের হাতে!
জেফ বেজোস: দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট
আমেরিকার অন্যতম প্রভাবশালী পত্রিকা ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ ২০১৩ সালে ২৫০ মিলিয়ন ডলারে কিনে নেন অ্যামাজন ও ব্লু অরিজিনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। তার বিপুল বিনিয়োগকৃত বিপুল অর্থ ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান পত্রিকাটিকে ডিজিটাল যুগে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে। তবে এর সম্পাদকীয়র স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বেজোসের ব্যবসায়িক স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো সংবাদ ওয়াশিংটন পোস্ট নিরপেক্ষভাবে প্রকাশ করতে পারা নিয়ে সন্দিহান সমালোচকরা।
ইলন মাস্ক:এক্স
টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক ২০২২ সালে ৪৪ বিলিয়ন ডলারে কিনে নেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার, যার নতুন নাম এখন ‘এক্স’। মাস্কের দাবি, তিনি ‘বাক্স্বাধীনতা’ রক্ষার জন্য এই প্ল্যাটফর্ম কিনেছেন। কিন্তু বাস্তবে, এক্সের অ্যালগরিদম এখন সরাসরি তাঁর নিয়ন্ত্রণে। কোন খবর বা মতামত বেশি প্রচার পাবে এবং কোনটি মুছে দেওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এখন মাস্কের হাতে।
মার্ক জাকারবার্গ: মেটা
মার্ক জাকারবার্গ সরাসরি কোনো সংবাদমাধ্যম কেনেননি, কিন্তু তাঁর প্রতিষ্ঠিত মেটা প্ল্যাটফর্মস (ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ) এখন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে সংবাদ পৌঁছানোর প্রধান মাধ্যম। কোন সংবাদমাধ্যম আর্থিকভাবে লাভবান হবে বা কোন খবর ব্যবহারকারীরা বেশি দেখবেন, তা নির্ভর করে জাকারবার্গের সংস্থার নির্ধারিত অ্যালগরিদমের ওপর। এর ফলে বিশ্বের তথ্যপ্রবাহের ওপর তার যে পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, তা কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরাসরি মালিকানার চেয়েও শক্তিশালী।
ল্যারি এলিসন: টুইটার-টিকটক
ওরাকলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসন সরাসরি কোনো সংবাদমাধ্যম কেনেননি, কিন্তু তিনি ভিন্ন উপায়ে গণমাধ্যমের ওপর প্রভাব বিস্তার করছেন। ইলন মাস্ক যখন টুইটার (বর্তমান এক্স) কেনেন, তখন এলিসন ছিলেন অন্যতম প্রধান বিনিয়োগকারী, তিনি ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিলেন। এই বিপুল আর্থিক সহায়তা মাস্ককে প্ল্যাটফর্মটি অধিগ্রহণ করতে সাহায্য করে।
বিশ্লেষকদের মতে, সরাসরি মালিক না হয়েও এলিসন গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিনিয়োগের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে তথ্যের প্রবাহকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখেন। তাঁর এই ভূমিকা দেখিয়ে দেয়, গণমাধ্যমের ওপর ধনকুবেরদের প্রভাব কেবল সরাসরি মালিকানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনা বাইটড্যান্সের চুক্তির ফলে ল্যারি এলিসন সরাসরি টিকটকের মালিক না হলেও তাঁর কোম্পানি ওরাকলের মাধ্যমে তিনি এই প্রভাবশালী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পাচ্ছেন।
সব মিলিয়ে প্রযুক্তি ও বাণিজ্যের জগৎ ছাড়িয়ে শীর্ষস্থাীয় ধনী ব্যক্তিদের গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে তথ্যের অবাধ প্রবাহ ভবিষ্যতে থাকবে তো?
তথ্যসূত্র: ফোবর্স, দ্য গার্ডিয়ান