বন্দর ও করিডর ইস্যুতে বামপন্থীদের দুই দিনব্যাপী রোডমার্চ শুরু
চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া ও মিয়ানমারের রাখাইনে করিডর দেওয়ার উদ্যোগের বিরুদ্ধে রোডমার্চ শুরু হয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম ‘সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণ’–এর উদ্যোগে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে এই রোডমার্চ শুরু হয়। দুই দিনব্যাপী চট্টগ্রাম অভিমুখী এ রোডমার্চ শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কুমিল্লায় পৌঁছেছে।

চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া ও মিয়ানমারের রাখাইনে করিডর দেওয়ার উদ্যোগের বিরুদ্ধে রোডমার্চ শুরু হয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম ‘সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণ’–এর উদ্যোগে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে এই রোডমার্চ শুরু হয়। দুই দিনব্যাপী চট্টগ্রাম অভিমুখী এ রোডমার্চ শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কুমিল্লায় পৌঁছেছে।
শুক্রবার সন্ধ্যার আগে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে এসে পৌঁছায়। পরে রাত পৌনে আটটার দিকে সেখানে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। জনসভায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতিমণ্ডলীর কাজী সাজ্জাদ জহির বলেন, ‘সাম্রাজ্যবাদের কোনো প্রতিনিধিকে বাংলাদেশে আধিপত্য বিস্তার করতে দেওয়া হবে না। আমাদের এই রোডমার্চের বার্তা নিশ্চয়ই প্রধান উপদেষ্টার কাছে পৌঁছেছে। তারপরও যদি চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, তবে আমরা আরও কঠোর ও ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলব। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আমাদের এই সংগ্রাম বহুদিনের, এবং তা অব্যাহত থাকবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, ‘অতীতে আপনার চেয়ে বড় বড় প্লেয়ার দেশকে সাম্রাজ্যবাদের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিল; কিন্তু আমাদের আন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত তাঁরা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। হাসিনা, খালেদা, এরশাদ—কেউই সফল হয়নি, আপনি তো অনেক পরের প্লেয়ার।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি কুমিল্লা জেলার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুজাত আলীর সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও গণমুক্তি ইউনিয়নের সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন আহম্মদ, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের আহ্বায়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও গণতান্ত্রিক বাম জোটের সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের সমন্বয়ক মাসুদ খান, বাংলাদেশের সোশ্যালিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহিনউদ্দীন চৌধুরী, সচেতন রাজনৈতিক ফোরামের কুমিল্লার সমন্বয়ক শেখ আবদুল মান্নান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোমেন প্রমুখ।
জনসভায় বক্তারা বলেন, আগের সরকারগুলোর ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকারও দেশকে সাম্রাজ্যবাদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব হবে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচন আয়োজন করা, না যে দেশকে বিদেশি প্রভাবের হাতে তুলে দেবে। অতএব, বিদেশি শক্তির কাছে বন্দর ইজারা দেওয়া বা করিডর ব্যবহারের যেকোনো পরিকল্পনা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। সরকার যদি এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নেয়, তবে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
জনসভা সঞ্চালনা করেন রোডমার্চের কুমিল্লার জনসভা আয়োজক কমিটির সদস্যসচিব খায়রুল আনাম। এ সময় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স), সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদসহ বিভিন্ন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
রোডমার্চে অংশগ্রহণকারীরা হাতে প্ল্যাকার্ড বহন করেন, যাতে লেখা ছিল: ‘বন্দর করিডর বিদেশিদের দেব না’, ‘মা-মাটি-মোহনা বিদেশিদের দেব না’, ‘বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত রুখে দাঁড়ান’, ‘চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া চলবে না’ এবং ‘স্টারলিংক চুক্তি বাতিল করতে হবে’ ইত্যাদি।
টাউন হল প্রাঙ্গণে পৌঁছানোর পর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিবাদী গান, নাটকসহ নানা পরিবেশনা উপস্থাপন করে। পরে শুরু হয় জনসভা ও বক্তৃতা পর্ব। কুমিল্লায় জনসভা শেষে রাতেই রোডমার্চটি ফেনীর পথে রওনা দেয়। শনিবার সকালে ফেনী থেকে কর্মসূচির নতুন ধাপ শুরু হয়ে বিকেল পাঁচটায় চট্টগ্রাম বন্দরের সামনে সমাপনী সমাবেশের মাধ্যমে রোডমার্চের সমাপ্তি হওয়ার কথা রয়েছে।