জামিনে মুক্তি পেয়েই নতুন দলে কেন্দ্রীয় আ.লীগ নেতা
জামিনে মুক্তি পেয়েই নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক উপকমিটির সদ্য সাবেক সদস্য মো. শামসুল ইসলাম। তিনি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিতে (এলডিপি) যোগদান করেছেন। শুধু তিনিই নন, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের পদ ছেড়ে এলডিপি যোগ দিয়েছেন আরও পাঁচজন।

জামিনে মুক্তি পেয়েই নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক উপকমিটির সদ্য সাবেক সদস্য মো. শামসুল ইসলাম। তিনি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিতে (এলডিপি) যোগদান করেছেন। শুধু তিনিই নন, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের পদ ছেড়ে এলডিপি যোগ দিয়েছেন আরও পাঁচজন।
গত ১৯ থেকে ২১ জুনের মধ্যে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি মো. এয়াকুব আলীর কাছে তারা সদস্যপদের ফরম জমা দেন। এলডিপি যোগদানকারীরা হলেন—আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক উপকমিটির সদ্য সাবেক সদস্য মো. শামসুল ইসলাম, উত্তর সাতকানিয়া যুবলীগের নেতা ও কেঁওচিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মনির আহমদ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি সদস্য আবু তালেব সিকদার, সাহেব মিয়া এবং ইউপি সদস্য ও মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী রোকেয়া বেগম।
এ প্রসঙ্গে এলডিপির চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি মো. এয়াকুব আলী বলেন, তারা দলের প্রাথমিক সদস্যপদ পূরণ করেছেন। তারা আওয়ামী লীগের কোনো পদে ছিলেন না বলে স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন। এমনিতে হয়তো নানা কারণে চাপের মুখে কর্মসূচিতে গিয়েছেন। তবে তারা যোগ দেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন অভিযোগ আসছে। বিষয়টি নিয়ে দলীয়ভাবে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। এ রকম কেউ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে এলডিপিতে যোগ দিলে তাকে তদন্ত করে বরখাস্ত করা হবে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতার ওপর হামলার একটি মামলায় জেল খাটেন আওয়ামী লীগ নেতা মো. শামসুল ইসলাম। গত ২ মার্চ চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে জামিনে মুক্তি পান এবং এরপরই দলবদল করেন তিনি।
মো. শামসুল ইসলামের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নে। ওই এলাকায় তাঁর মালিকানাধীন একাধিক ইটভাটা রয়েছে। আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এই নেতা ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন করতে অর্থ সহায়তা দেওয়ার অভিযোগেও আলোচনায় আসেন। বিপ্লব বড়ুয়ার সুপারিশেই তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একটি পদ পেয়েছিলেন এবং তার সুবাদে গণভবনে যাতায়াত ছিল অনায়াস।
এ বিষয়টি ঘিরে ফেসবুকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় কর্মী-সমর্থকরা নানা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতাকর্মীর অভিযোগ, মনির আহমদ উত্তর সাতকানিয়া যুবলীগের নেতা থাকার সময় দলীয় কোন্দল কাজে লাগিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ২০১৬ সালের ৪ জুন কেঁওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনে জয়ী হন। ওই নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীকধারী প্রার্থী, একই সংগঠনের উত্তর সাতকানিয়া সভাপতি ওচমান আলীকে পরাজিত করেন। এরপর তিনি দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার পিএস মো. আরিফের মাধ্যমে শীর্ষ নেতাদের ঘনিষ্ঠ হন। এমনকি বিপ্লব বড়ুয়ার পক্ষ থেকে দেওয়া ব্যক্তিগত ও দলীয় উপহারসামগ্রী বিতরণের দায়িত্বও পালন করতেন তিনি।
এছাড়া ইউপি সদস্য আবু তালেব সিকদার ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাতকানিয়া থানায় হওয়া মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি হয়ে গ্রেপ্তার হন এবং পরে জামিনে মুক্তি পান। সাহেব মিয়া ও রোকেয়া বেগমও দলটির বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
এই দলবদল নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় ওঠে। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ লেখেন, “সাতকানিয়ার বড় বড় আওয়ামী লীগ নেতার শ্রেষ্ঠ আবিষ্কারগুলোর এখন অন্য দলে যোগদানের হিড়িক চলছে।”
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা লুৎফর রহমান মাসুম মন্তব্য করেন, “জাতীয় বেইমানদের চিনে রাখবে প্রিয় কেঁওচিয়াবাসী।”
জামায়াতের কেরানীহাট শাখার নেতা কাজী ওসমান গণি লেখেন, “এগুলো কারা...? হায় রে এলডিপি! কেঁওচিয়ার আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন চলছে...”
ফেসবুকে মো. শফিউল আলম লেখেন, “আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে তারা আবার শামসুল ইসলাম ও মনির আহমদকে দলে ফিরিয়ে আনবে।”
আজিজুল হক নামের একজন প্রশ্ন তুলেছেন, “আওয়ামী লীগের লোকজন কীভাবে কর্নেল অলি আহমদের দলে থাকতে পারেন?”
এসব অভিযোগের জবাবে শামসুল ইসলাম বলেন, “অলি সাহেব আমাদের এলাকার সাবেক এমপি। ঢাকায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছি। আসলে আমি কেঁওচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার চিন্তা করছি। এলাকার সমর্থকেরা এলডিপিতে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। এখন পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেব।”
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মনির আহমদ বলেন, “আমি আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলাম, তবে কোনো পদে ছিলাম না। এখন এলডিপির সমর্থক হিসেবে সদস্য ফরম পূরণ করেছি।”
আবু তালেব বলেন, “আওয়ামী লীগ করে কিছুই পাইনি। কারও সঙ্গে অন্যায় করিনি, তবুও জেল খেটেছি। তাই এলডিপিতে যোগ দিয়েছি।”
সাহেব মিয়া বলেন, “আমাদের চেয়ারম্যান ওসমান আলী আওয়ামী লীগ করতেন, তাই আমিও যুক্ত ছিলাম। তবে কর্নেল অলি একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক। তাই তাঁর দলে যোগ দিয়েছি। আগাম নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৪ আসনে তাঁর পক্ষে কাজ করব, ইনশাআল্লাহ।”
রোকেয়া বেগম দলবদল প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।