ফেডারেল অর্থে উদ্ভাবিত পেটেন্ট সরকার দখল করতে পারে: হার্ভার্ডকে সতর্কবার্তা
ফেডারেল সরকার শুক্রবার হার্ভার্ডকে জানিয়েছে, ফেডারেল অর্থে হওয়া গবেষণা থেকে পাওয়া পেটেন্ট তারা দখল করতে পারে—এটি ট্রাম্প প্রশাসন ও হার্ভার্ডের চলমান বিরোধের নতুন ধাপ।

ফেডারেল সরকার শুক্রবার হার্ভার্ডকে জানিয়েছে, ফেডারেল অর্থে হওয়া গবেষণা থেকে পাওয়া পেটেন্ট তারা দখল করতে পারে—এটি ট্রাম্প প্রশাসন ও হার্ভার্ডের চলমান বিরোধের নতুন ধাপ।
বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক হার্ভার্ড ফেডারেল আইন মেনে পেটেন্ট সংক্রান্ত নিয়ম পালন করেছে কি না, তার ওপর একটি 'তাৎক্ষণিক ও সর্বাত্মক পর্যালোচনা' শুরু করছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবারকে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করেছেন।
একজন জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেছেন, সংশ্লিষ্ট পেটেন্টগুলোর মূল্য শত শত মিলিয়ন ডলার হতে পারে। আর তার চিঠিতে লুটনিক হুমকি দিয়েছেন, হার্ভার্ড যেখানে সরকারের শিরোনাম ও তথ্য প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে, সেসব পেটেন্টের তৃতীয় পক্ষকে লাইসেন্স দিয়ে দেওয়া হবে বা পেটেন্টের শিরোনামই সরকার নিয়ে নেবে।
লুটনিক ম্যাসাচুসেটস-ভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানকে ফেডারেল অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত সব পেটেন্টের তথ্য সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছেন।
লুটনিক বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি, হার্ভার্ড আমেরিকান করদাতাদের প্রতি তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে এবং ফেডারেল অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণা কর্মসূচি ও সেখান থেকে উদ্ভূত বৌদ্ধিক সম্পত্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আইন, বিধি ও চুক্তিভিত্তিক শর্ত লঙ্ঘন করেছে।'
তিনি হার্ভার্ডকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছেন জবাব দেয়ার জন্য এবং প্রমাণ করার জন্য যে তারা বেই-ডোল অ্যাক্ট মেনে চলছে। এই আইন অনুযায়ী, যে সব বিশ্ববিদ্যালয় ফেডারেল গবেষণা অনুদান পায়, তাদের দেখাতে হবে যে ওই অর্থায়ন থেকে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি আমেরিকানদের উপকারে ব্যবহার হচ্ছে।
ট্রাম্প প্রশাসন চাইছে হার্ভার্ড জানাক—ফেডারেল অনুদান থেকে পাওয়া সব পেটেন্টের তালিকা, সেগুলো কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে, আর লাইসেন্স চুক্তিতে কি যুক্তরাষ্ট্রে বড় পরিসরে উৎপাদনের শর্ত আছে কিনা ও কারা সেই লাইসেন্স নিয়েছে।
হার্ভার্ডের এক মুখপাত্র এই পদক্ষেপকে বলেছেন 'হার্ভার্ডকে তার অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার কারণে টার্গেট করার আরেকটি প্রতিশোধমূলক প্রচেষ্টা।'
মুখপাত্র বলেন, 'হার্ভার্ডে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ও পেটেন্টগুলো জীবনরক্ষাকারী এবং শিল্পকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে। আমরা বেই-ডোল অ্যাক্টের প্রতি পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং নিশ্চিত করতে চাই যে, জনসাধারণ হার্ভার্ডে ফেডারেল অর্থায়নে উদ্ভূত অসংখ্য উদ্ভাবনের সুফল পেতে পারে।'
ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে যে তারা ক্যাম্পাসে ইহুদি-বিরোধিতার মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং এর ফলে তারা বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল গবেষণা অনুদান স্থগিত বা বন্ধ করে দিয়েছে। হার্ভার্ড এই অর্থায়ন স্থগিতের বিরুদ্ধে মামলা করেছে এই অভিযোগ করে যে সরকার বেআইনিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রথম সংশোধনী-সুরক্ষিত কর্মকাণ্ডের জন্য শাস্তি দিচ্ছে এবং তাদের একাডেমিক প্রোগ্রামের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ মেনে নিতে বাধ্য করার চেষ্টা করছে।
অর্থায়ন বন্ধের আগে প্রশাসন হার্ভার্ডকে বলেছিল—কিছু বিভাগের বাইরের অডিট করাতে, ডিইআই কর্মসূচি বন্ধ করতে এবং শৃঙ্খলাবিধি কড়াকড়ি করতে, নইলে ফেডারেল অর্থায়ন বন্ধ হবে। হার্ভার্ড রাজি হয়নি।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আইআরএস-কে (আভ্যন্তরীণ রাজস্ব বিভাগ) হার্ভার্ডের করমুক্ত মর্যাদা পুনর্বিবেচনার জন্যও চাপ দিয়েছেন। এ ছাড়াও তিনি তার প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন হার্ভার্ডে পড়াশোনা করতে আসা অধিকাংশ বিদেশি শিক্ষার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিতে—যদিও আদালত সেই পদক্ষেপ আটকে দিয়েছে।
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি চাইলে হার্ভার্ডের সঙ্গে সমঝোতা করতে পারেন। অন্য কিছু আইভি লিগ স্কুল, যেমন কলাম্বিয়া ও ব্রাউন, অর্থায়ন চালু রাখতে সরকারকে কিছু ছাড় দিয়েছে।
সূত্র: সিবিএস নিউজ