অ্যাপোলো ১৩ মিশনের কমান্ডার জিম লোভেলের মৃত্যু

বিখ্যাত অ্যাপোলো ১৩ মিশনের কমান্ডার জিম লাভেল মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। নাসা জানিয়েছে, 'আমরা দুঃখিত অ্যাপোলো ১৩ কমান্ডার ও চারবারের স্পেসফ্লাইট যোদ্ধা জিম লোভেলের মৃত্যুতে। লোভেলের জীবন ও কাজ লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা ছিল। কঠিন পরিস্থিতিতে তার সাহস আমাদের চাঁদ ও তার বাইরে যাত্রার পথ তৈরি করেছে—যাত্রা যা আজও চলমান।'

Aug 9, 2025 - 12:10
অ্যাপোলো ১৩ মিশনের কমান্ডার জিম লোভেলের মৃত্যু
ছবি: নাসার সৌজন্যে

বিখ্যাত অ্যাপোলো ১৩ মিশনের কমান্ডার জিম লাভেল মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। নাসা জানিয়েছে, 'আমরা দুঃখিত অ্যাপোলো ১৩ কমান্ডার চারবারের স্পেসফ্লাইট যোদ্ধা জিম লোভেলের  মৃত্যুতে। লোভেলের জীবন কাজ লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা ছিল। কঠিন পরিস্থিতিতে তার সাহস আমাদের চাঁদ তার বাইরে যাত্রার পথ তৈরি করেছেযাত্রা যা আজও চলমান।'

নাসার ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক শন ডাফির একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, লোভেল বৃহস্পতিবার ইলিনয়ের লেক ফরেস্টে মারা গেছেন।

তার পরিবার নাসার মাধ্যমে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলেছে, 'আমরা তার অসাধারণ জীবন কর্মজীবন নিয়ে অত্যন্ত গর্বিত, বিশেষত মানব মহাকাশ অভিযানের পথপ্রদর্শক হিসেবে তার কিংবদন্তি নেতৃত্বের জন্য। কিন্তু আমাদের জন্য তিনি ছিলেন বাবা, দাদু এবং পরিবারের নেতা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তিনি আমাদের নায়ক। আমরা তার অবিচল আশাবাদ, হাস্যরস, এবং যেভাবে তিনি আমাদের অসম্ভব কিছু করার সাহস দিতেন, তা মিস করব। তিনি সত্যিই একক।'

১৯৬৮ সালে অ্যাপোলো মিশনের কমান্ড মডিউল পাইলট হিসেবে তিনি ফ্র্যাঙ্ক বরম্যান উইলিয়াম অ্যান্ডার্সের সঙ্গে মিলে চাঁদের কক্ষপথে প্রথম তিন নভোচারীর একজন হন।

কয়েকটি মিশনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোভেল অ্যাপোলো ১৩-এর কমান্ডার হন, যা মাত্র দুদিনের মধ্যে একটি অক্সিজেন ট্যাংক বিস্ফোরণের কারণে বিপর্যয়ের মুখ থেকে বেঁচে যায়।

রন হাওয়ার্ড পরিচালিত 'অ্যাপোলো ১৩' সিনেমায় টম হ্যাঙ্কস লোভেলের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, যা ওই মিশনের ঘটনা তুলে ধরেছিল।

ওহাইওর ক্লিভল্যান্ডে ১৯২৮ সালের ২৫ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন লোভেল। তিনি ম্যাডিসনের উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয় মার্কিন নৌসেনা একাডেমি থেকে শিক্ষা নেন। নাসায় ১৯৬২ সালে নভোচারী নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি নৌসেনার পাইলট হিসেবে কাজ করেছেন।

১৯৬৫ সালের জুনে জেমিনি মিশনের ব্যাকআপ পাইলট হিসেবে কাজ করেন এবং একই বছর ঐতিহাসিক জেমিনি মিশনের পাইলট হিসেবে অংশ নেন, যেখানে প্রথমবার দুটি মানব চালিত স্পেসক্রাফটের একত্রে যাত্রা ঘটে।

১৯৬৬ সালের ১১ নভেম্বর লোভেল কমান্ডার এডউইন 'বাজ' অলড্রিন পাইলট হিসেবে জেমিনি ১২ মিশন শুরু হয়, যা চারদিন ধরে ৫৯ বার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে জেমিনি প্রোগ্রাম সফলভাবে শেষ করে।

১৯৬৮ সালের ডিসেম্বরে অ্যাপোলো মিশনের কমান্ড মডিউল পাইলট নেভিগেটর হিসেবে তিনি ছয়দিনের মিশনে পৃথিবীর মহাকর্ষ থেকে বের হয়ে চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছানো প্রথম মানুষ হন। ওই মিশনে লোভেল, বরম্যান অ্যান্ডার্স চাঁদকে দশবার প্রদক্ষিণ করেন, তবে চাঁদে অবতরণ করেননি।

১৯৬৯ সালের জুনে তিনি নীল আর্মস্ট্রং-এর ব্যাকআপ কমান্ডার নির্বাচিত হন অ্যাপোলো ১১ মিশনের জন্য।

অ্যাপোলো ১৩ মিশনের কমান্ডার হিসেবে তিনি চাঁদে দ্বিতীয়বার যাত্রা করা প্রথম ব্যক্তি হন। ১৯৭০ সালের ১১ এপ্রিল মিশন শুরু হয়, যা ১০ দিনের ছিল, কিন্তু অক্সিজেন ট্যাংক বিস্ফোরণের কারণে তা বাতিল করা হয়।

লোভেল সহকর্মীরা, জ্যাক সুইগার্ট ফ্রেড হেইস, হিউস্টনের গ্রাউন্ড কন্ট্রোলারদের সঙ্গে কাজ করে তাদের লুনার মডিউলকে জরুরি জীবনরক্ষাকারী নৌকায় পরিণত করেন। লুনার মডিউলের সিস্টেম চালিয়ে তারা যথেষ্ট বিদ্যুৎ পানি সংরক্ষণ করেন যা তাদের বেঁচে থাকার জন্য পর্যাপ্ত ছিল এবং তারা চাঁদের চারপাশ দিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসেন।

অ্যাপোলো ১৩ ক্রু সদস্যরা ১৯৭০সালের ১৭ এপ্রিল নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে আসেন।

লোভেল ১৯৭৩ সালের মার্চে নৌবাহিনী মহাকাশ কর্মসূচি থেকে অবসর নেন। মোট চারটি মহাকাশ মিশনে অংশ নেন এবং ১৯৭০-এর মধ্য পর্যন্ত স্পেসে থাকার সর্বোচ্চ বিশ্বরেকর্ড ৭১৫ ঘণ্টা মিনিট ৫৭ সেকেন্ড ধরে রাখেন।

মহাকাশ কর্মসূচি ছেড়ে দেওয়ার পর লোভেল টেলিযোগাযোগ খাতে কাজ করেন এবং ১৯৯১ সালে সেন্টেল কর্পোরেশনের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।

তিনি কংগ্রেশনাল মেডেল অফ অনার প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম পাওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন।

লোভেল ২০২৩ সালে মারা যাওয়া তার স্ত্রী মারিলিনের সাথে ছয় দশক ধরে বিবাহিত ছিলেন। তিনি চার সন্তান রেখে গেছেন।

সূত্র: এবিসি নিউজ