নিবন্ধন ও দাঁড়িপাল্লা প্রতীক ফিরে পেল জামায়াতে ইসলামী

দীর্ঘ সাত বছর পর আবারও রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ ফিরে পেয়েছে জামায়াতে ইসলামী। আজ মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয় এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এর আগে উচ্চ আদালতের রায়ের ভিত্তিতে ৪ জুন জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি।

Jun 24, 2025 - 15:22
নিবন্ধন ও দাঁড়িপাল্লা প্রতীক ফিরে পেল জামায়াতে ইসলামী
ছবি: সংগৃহীত্

দীর্ঘ সাত বছর পর আবারও রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ ফিরে পেয়েছে জামায়াতে ইসলামী। আজ মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয় এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এর আগে উচ্চ আদালতের রায়ের ভিত্তিতে ৪ জুন জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি।

ইসির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে জারি করা প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক পুনর্বহাল করা হলো।

এর আগে, গত ৪ জুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) এক বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সেদিন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, খুব শিগগিরই জামায়াত তাদের নিবন্ধন ফিরে পাবে—এ জন্য ইসি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে দলীয় প্রতীক ফিরিয়ে দিতে কিছু দাপ্তরিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, তাই এতে কিছুটা সময় লাগবে।

জামায়াতে ইসলামী তাদের প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ইসির কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন করেছিল। এই আবেদন পর্যালোচনায় ইসি বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নেয়, যার মধ্যে অন্যতম হলো “স্ট্যাটাসকো অ্যান্টে” নীতির প্রয়োগ—অর্থাৎ ২০১৩ সালে জামায়াতের নিবন্ধনের সময় তাদের যে দলীয় প্রতীক ছিল, সেটিই পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত। পাশাপাশি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সংশ্লিষ্ট ধারাগুলোও পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন সনদ দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু ২০০৯ সালে সেই নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ জন নাগরিক।

রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে, ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্টের তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। তবে আদালত ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগও দেন, যা পরবর্তীতে একই বছর আপিলে রূপান্তরিত হয়। পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামী নিয়মিতভাবে ‘লিভ টু আপিল’ (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে।

২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে। রায়ের পর তা স্থগিত করতে জামায়াত আবেদন করলেও, ৫ আগস্ট আপিল বিভাগের তৎকালীন চেম্বার বিচারপতি তা খারিজ করে দেন। এরপর ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতের করা আপিল ও লিভ টু আপিল ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর আইনজীবী না থাকায় খারিজ হয়ে যায়। পরে আবেদন করলে, ২২ অক্টোবর আপিল বিভাগ তা পুনরুজ্জীবিত করে।

মূল আপিলের শুনানি শুরু হয় ৩ ডিসেম্বর। দলটি প্রতীক বরাদ্দ চেয়ে আলাদা আবেদন করলে, ১২ মে সেটি চেম্বার আদালত মূল মামলার সঙ্গে একীভূত করেন। সবশেষে, শুনানি শেষে ১ জুন আপিল বিভাগ রায় দেন।

এদিকে, ২০২৩ সালের ১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন দেয়। তবে ৫ আগস্ট সরকার পতন ও ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের গঠনের পর সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।