ইরানে বিমান হামলা কি যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ ক্ষমতা আইনের লঙ্ঘন?
গত ২১ জুন ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এই হামলার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেমন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ক্ষমতা প্রদর্শন করেছেন, তেমনি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নও উঠে এসেছে— এই সিদ্ধান্ত কি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান ও ১৯৭৩ সালের যুদ্ধ ক্ষমতা আইন (War Powers Resolution) লঙ্ঘন করেছে?

গত ২১ জুন ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এই হামলার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেমন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ক্ষমতা প্রদর্শন করেছেন, তেমনি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নও উঠে এসেছে— এই সিদ্ধান্ত কি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান ও ১৯৭৩ সালের যুদ্ধ ক্ষমতা আইন (War Powers Resolution) লঙ্ঘন করেছে?
পলিটিফ্যাক্টের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডেমোক্রেটিক দলের আইনপ্রণেতা ও হাউজ ইন্টেলিজেন্স কমিটির র্যাঙ্কিং মেম্বার জিম হাইমস এক বিবৃতিতে বলেন, "এই হামলা ছিল “সংবিধানের স্পষ্ট লঙ্ঘন”।
সিনেটর অ্যাডাম শিফ বলেন, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনো প্রমাণ ছিল না এবং সংসদের অনুমতি ছাড়াই এ হামলা চালানো হয়েছে। এটি পুরোপুরি অসাংবিধানিক। এটি আমাদের আরও একটি ‘চিরস্থায়ী যুদ্ধের’ দিকে ঠেলে দিচ্ছে।"
রিপাবলিকান সদস্য থমাস ম্যাসি এবং ডেমোক্র্যাট টিম কেইন এর আগেই কংগ্রেসে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন, যাতে বলা হয়— ইরানে হামলা চালাতে কনগ্রেসের অনুমতি লাগবে। হামলার পর ম্যাসি সামাজিক মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে ইরানে হামলাকে ইঙ্গিত করে লেখেন, "এটি সংবিধানসম্মত নয়।"
এদিকে হামলার একদিন পর ২২ জুন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিট হেগসেথ দাবি করেন, প্রশাসন ওয়ার পাওয়ার্স অ্যাক্টের নিয়ম মেনেই কংগ্রেসকে অবহিত করেছে, যদিও "প্লেন নিরাপদে ফিরে আসার পর"। ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, "আমরা ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করছি না, আমরা যুদ্ধ করছি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে।" তিনি এটিকে একটি সার্জিকাল স্ট্রাইক হিসেবে বর্ণনা করেন।
ওয়ার পাওয়ার্স অ্যাক্ট (১৯৭৩) কী বলে?
যখন ভিয়েতনাম যুদ্ধ কঠিন হয়ে উঠতে থাকে, তখন মার্কিন আইনপ্রণেতারা বিদেশে সেনা পাঠানোর বিষয়ে নিজেদের ভূমিকা নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে কংগ্রেস War Powers Resolution বা যুদ্ধ ক্ষমতা সংক্রান্ত প্রস্তাব পাস করে, যা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের ভেটো অগ্রাহ্য করে আইনে পরিণত হয়।
এই প্রস্তাবে বলা হয়, যুদ্ধ ঘোষণা করা ছাড়াই প্রেসিডেন্ট যদি যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীকে কোনো সংঘাতে পাঠান, তাহলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কংগ্রেসকে তা জানাতে হবে। কংগ্রেস তা চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি না দিলে ৬০ দিনের মধ্যে সেনা মোতায়েন বন্ধ করতে হবে। তবে কংগ্রেস অনুমতি না দিলেও প্রেসিডেন্ট যদি পরিস্থিতিকে জরুরি মনে করেন, তাহলে তিনি অতিরিক্ত ৩০ দিন সময় পাবেন অপারেশন শেষ করার জন্য।
তবে প্রেসিডেন্টরা সচরাচর তাদের ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে ছেড়ে দিতে আগ্রহী নন। তাই তাঁরা সাধারণত এই আইনের মৌলিক শর্ত মেনে চললেও কংগ্রেসের কাছে “অনুমতি” নয় বরং “সমর্থন” চেয়ে থাকেন। তাও যখন অভিযান অনেকটাই শুরু হয়ে গেছে বা শিগগির শুরু হওয়ার পর্যায়ে আছে।
রাজনৈতিক বাস্তবতা ও কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জোশুয়া হুডার বলেন, “ম্যাসি ও কেইনের প্রস্তাবগুলো কবে ভোটে উঠবে, আদৌ উঠবে কি না, বা পাস হলেও প্রেসিডেন্টের ভেটো ঠেকানো যাবে কি না—সবই এখন অনিশ্চিত। এমনকি আইন হয়ে গেলেও তা বাস্তবে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না, তাও স্পষ্ট নয়। কারণ, যুদ্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেসের মধ্যে আংশিকভাবে ভাগ হয়ে আছে।” ইরানে মার্কিন হামলার ঠিক কিছুদিন্ আগেই পলিটিফ্যাক্টকে এই কথা বলেন তিনি।
ক্যামেরন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামরিক ইতিহাসবিদ ল্যান্স জানডা বলেন, "কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া নির্ভর করে কোন দল সংখ্যাগরিষ্ঠ তার ওপর। যেহেতু ২০২৬ পর্যন্ত কংগ্রেস রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে, তাই ট্রাম্পের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণের সম্ভাবনাও কম।"
ডেমোক্র্যাটদের না জানিয়েই হামলা
আরেকটি বিতর্ক উঠেছে— হোয়াইট হাউজ শুধুমাত্র রিপাবলিকান নেতাদেরই হামলার আগে অবহিত করেছে, যা ‘গ্যাং অব এইট’ নীতির লঙ্ঘন। সাধারণত, বড় কোনো গোপন অপারেশনের আগে হাউজ ও সিনেটের দুই দলেরই শীর্ষ নেতাদের অবহিত করা হয়। তবে এবার সেই রীতি মানা হয়নি।
জিম হাইমস জানিয়েছেন, তিনি হামলার খবর প্রথমে ট্রাম্পের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট থেকে জানতে পারেন, যা পুরো প্রক্রিয়াকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।