বিশ্ববাজারে ডলার হারাচ্ছে আস্থা, মান কমেছে ১০ শতাংশের বেশি
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ডলারের মান বিশ্ববাজারে ১০ শতাংশের বেশি কমেছে, যা ১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে বড় দরপতন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোর মুদ্রার বিপরীতে ডলারের মান কমার পেছনে রয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক নীতির প্রভাব।

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ডলারের মান বিশ্ববাজারে ১০ শতাংশের বেশি কমেছে, যা ১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে বড় দরপতন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোর মুদ্রার বিপরীতে ডলারের মান কমার পেছনে রয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক নীতির প্রভাব।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র স্বর্ণমান ত্যাগ করার পর ডলারের বড় পতন দেখা গিয়েছিল। এবার সেই রকম পতন আবার দেখা যাচ্ছে। তবে এবারের প্রেক্ষাপট আলাদা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আগ্রাসী শুল্কনীতি, মূল্যস্ফীতির ভয়, সরকারি ঋণের চাপ এবং আত্মকেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতি— সব মিলিয়ে ডলারের ওপর আস্থা কমে যাচ্ছে। ফলে বিশ্ববাজারে ডলারের চাহিদা কমে গেছে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
ডলারের পতনে মার্কিন নাগরিকদের বিদেশে ভ্রমণ ব্যয় বেড়েছে, আর বিদেশি বিনিয়োগও কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে, রপ্তানিকারকরা কিছুটা সুবিধা পেলেও আমদানির ব্যয় বেড়ে দেশের অর্থনীতিতে নতুন চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থায় মার্কিন অর্থনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও বাড়ছে।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের বিশ্লেষক স্টিভ ইংল্যান্ডার বলেছেন, "ডলার দুর্বল না শক্তিশালী, সেটি মুখ্য নয়— প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্ব আজ যুক্তরাষ্ট্রকে কীভাবে দেখছে"। ট্রাম্প প্রশাসনের শুরুতে ডলারের মান কিছুটা বেড়েছিল, কারণ বিনিয়োগকারীরা বিশ্বাস করেছিলেন তিনি ব্যবসাবান্ধব হবেন। কিন্তু শুল্ক বাড়ানোর হুমকি, মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা এবং শেয়ারবাজারে অস্থিরতা সেই আস্থাকে নষ্ট করে দেয়।
২ এপ্রিল ট্রাম্প হঠাৎ করেই উচ্চ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, যা বিনিয়োগকারী ও বিশ্লেষকদের কাছে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিল। এর ফলে বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং ডলারের পতন ত্বরান্বিত হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় সরকারি খরচ ও ঋণের পরিকল্পনা, যা ভবিষ্যতে বাজেট ঘাটতি আরও বাড়াবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই অবস্থায় অনেক বড় বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ও পেনশন তহবিল এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের বাজারে বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজছে। ইউরোপীয় শেয়ারবাজারে রূপান্তরযোগ্য মুনাফা ডলারের তুলনায় বেশি হচ্ছে, যা বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে।
একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি বন্ডে বিনিয়োগের আগ্রহ কমে গেছে। ট্রেজারি থেকে ঋণ নিয়ে ঘাটতি পূরণ করার পরিকল্পনা থাকলেও ঋণদাতারা এখন ডলারে আস্থা হারাচ্ছেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর ডলারভিত্তিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর পর থেকে অনেক দেশ ডলার ছাড়াও বিকল্প মুদ্রায় লেনদেন শুরু করেছে, যাকে বলা হচ্ছে ‘ডিডলারাইজেশন’। যদিও এটি এখনও শুরুর পর্যায়ে, তবে এটি ডলারের ওপর আস্থাহীনতার একটি প্রতীক।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এত দিন ডলারকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ধরা হতো, কিন্তু এখন তার অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ। বাড়তে থাকা ঋণ, বৈশ্বিক আস্থা সংকট এবং নীতিনির্ধারণে অনিশ্চয়তা— সব মিলিয়ে ডলার তার আগের মর্যাদা হারানোর পথে রয়েছে।