আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী কমলে ইউএনটি-এর আয় কমতে পারে প্রায় ৫ কোটি ডলার

নর্থ টেক্সাসের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের এক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। গত শিক্ষাবর্ষে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির হার আগের বছরের তুলনায় ২২% বেড়ে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছিল। তবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানোর জন্য ব্যবহৃত ভিসা প্রক্রিয়ায় ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক পরিবর্তন সেই প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

Aug 13, 2025 - 07:53
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী কমলে ইউএনটি-এর আয় কমতে পারে প্রায় ৫ কোটি ডলার
ছবি: ইউনিভার্সিটি অব নর্থ টেক্সাস

নর্থ টেক্সাসের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের এক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। গত শিক্ষাবর্ষে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির হার আগের বছরের তুলনায় ২২% বেড়ে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছিল। তবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানোর জন্য ব্যবহৃত ভিসা প্রক্রিয়ায় ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক পরিবর্তন সেই প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

২০২৪ সালের ওপেন ডোর্স প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ইউনিভার্সিটি অব নর্থ টেক্সাস (ইউএনটি), ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট ডালাস (ইউটি ডালাস) এবং ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন (ইউটিএ) — এই তিনটি প্রতিষ্ঠান টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের মধ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যায় শীর্ষে রয়েছে। এরা একসঙ্গে ৩৯,০০০ বিদেশি শিক্ষার্থীকে আতিথ্য দিচ্ছে।

আন্তর্জাতিক শিক্ষকদের সংগঠন 'নাফসা' (এনএএফএসএ)-এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি ৩০% থেকে ৪০% পর্যন্ত কমতে পারে, যার ফলে মোট ভর্তির হার ১৫% হ্রাস পাবে এবং প্রায় বিলিয়ন ডলার আয়ের ঘাটতি তৈরি হবে। অঙ্গরাজ্যের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যখন আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রকাশ করছে, তখন স্পষ্ট হচ্ছেনর্থ টেক্সাসের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশি শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার আর্থিক ধাক্কা সামলানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ইউনিভার্সিটি অব নর্থ টেক্সাসের খসড়া বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী কমে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪৭. মিলিয়ন ডলার আয়ের ক্ষতি হবে। বাজেটে বলা হয়েছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীরা লাভজনক একটি অংশ, কারণ তারা আউট-অফ-স্টেট টিউশন ফি দেয় এবং সাধারণত তুলনামূলক কম আর্থিক সহায়তা পায়।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মতে, ইউএনটি-তে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা গত শিক্ষাবর্ষ থেকেই কমতে শুরু করেছে, যদিও অন্যত্র প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আসন্ন শরৎ সেমিস্টারেও এই পতন অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। চলতি বছরের মে মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট হ্যারিসন কেলার রিজেন্ট বোর্ডকে বলেন, 'বিভিন্ন বাজার পরিস্থিতি এবং ভিসা সংক্রান্ত ভূ-রাজনৈতিক সমস্যার' কারণে ইউএনটি-এর স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামে ইতিমধ্যে ,৩০০ কম আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে এবং ২০২৫ সালের শরৎ সেমিস্টারে আরও ২৫% হ্রাসের আশঙ্কা রয়েছে।

কেলার বলেন, 'ভর্তির এই পতন  ইউএনটি-এর জন্য অস্বাভাবিক কিছু নয়। আমি যখন রাজ্যের অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলি, দেখি এটি এখন একটি বৃহত্তর প্রবণতার অংশ।'

টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় বোর্ড অব রিজেন্টসের প্রকাশিত খসড়া বাজেটে দেখা গেছে, ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন (ইউটিএ) আগামী অর্থবছরে টিউশন আয়ে ১৩ মিলিয়ন থেকে ১৫. মিলিয়ন ডলারের ঘাটতির মুখে পড়তে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়টি আন্তর্জাতিক স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০% কমে যাবে বলে ধরে নিচ্ছে, সঙ্গে ৩০০ কম স্নাতক শিক্ষার্থীযার পেছনে ২০২৫ সালের জুনের আদালতের রায় দায়ী। সেই রায়ে অনথিভুক্ত বাসিন্দাদের জন্য ইন-স্টেট টিউশন অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।

গত বসন্তে ইউটিএ জানিয়েছিল, সেখানে ,২২৩ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ক্লাসে ভর্তি হয়েছিল। শরৎকালের ভর্তি সংখ্যা এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

টেক্সাস উইমেনস ইউনিভার্সিটির একজন মুখপাত্র বলেন, তাদের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা পূর্ববর্তী বছরের সমান রয়েছে। ২০২৫ সালের শরৎ সেমিস্টারের জন্য এখন পর্যন্ত ১৭৭ জন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছে, যেখানে বসন্ত সেমিস্টারে এই সংখ্যা ছিল ১৯৯। তবে ক্লাস শুরুর আগে অবশিষ্ট দুই সপ্তাহে আরও ১০ থেকে ১৫ জন শিক্ষার্থী যোগ হতে পারে বলে তারা আশা করছে।

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সংখ্যার পূর্বাভাস ইউটি ডালাস-এর ক্ষেত্রে পাওয়া যায়নি, যদিও এটি রাজ্যের দ্বিতীয় সর্বাধিক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

হ্রাসের কারণ

'নাফসা'-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র টেক্সাসেই এই শরতে আগের বছরের তুলনায় ১৪,০০০ কম আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারে, যা ৩৮৮. মিলিয়ন ডলারের আয়হানির সমান।

পলিটিকো-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসগুলো শিক্ষার্থী এবং শিক্ষা-সম্পর্কিত ভিসা প্রার্থীদের যাচাই-বাছাইয়ের পদ্ধতিতে বড় পরিবর্তন এনেছে। নতুন নিয়মে আবেদনকারীদের সামাজিক মাধ্যম প্রোফাইল পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছেতাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, সংস্কৃতি, সরকার, প্রতিষ্ঠান বা মূলনীতি সম্পর্কে কোনো বৈরিতা আছে কি না। নাফসার মতে, এর ফলে কিছু শিক্ষার্থীর ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান হতে পারে বা সম্ভাব্য আবেদনকারীরা আবেদন করতেই নিরুৎসাহিত হতে পারেন।

এছাড়াও, গত মে মাসেযা শিক্ষার্থী ভিসা সাক্ষাৎকারের সবচেয়ে ব্যস্ত সময়বিদেশি দূতাবাসগুলো সাময়িকভাবে এসব সাক্ষাৎকার স্থগিত করেছিল। এর ফলে অনেক বিদেশি শিক্ষার্থী শরৎ সেমিস্টারের গুরুত্বপূর্ণ সময়সীমা পূরণ করতে ব্যর্থ হতে পারে।

আন্তর্জাতিক শিক্ষা ইনস্টিটিউটের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আগামী শিক্ষাবর্ষে স্নাতক পর্যায়ে ৪০% বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৪৯% বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি কমার আশঙ্কা করছে।

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, 'ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত সমস্যাগুলো এখনো সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের কারণ, যেখানে ৮৭% উত্তরদাতা বলেছেনবিলম্ব বা প্রত্যাখ্যান ভর্তি প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে।' তারা আরও যোগ করেছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কয়েক বছর ধরেই ভিসা-সংক্রান্ত উদ্বেগ প্রকাশ করছে।

নর্থ টেক্সাসের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশে ভিসা প্রক্রিয়ার জটিলতা শরৎ সেমিস্টারের ভর্তি সংখ্যায় তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলতে পারে।

নাফসা জানিয়েছে, ভারত, চীন, নাইজেরিয়া জাপানে অবস্থিত মার্কিন কনস্যুলেটগুলো সারা গ্রীষ্মে শিক্ষার্থী ভিসা আবেদনকারীদের জন্য সীমিত বা কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্টই দেয়নি। আন্তর্জাতিক শিক্ষা ইনস্টিটিউট বলেছে, নর্থ টেক্সাসের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বিশাল অংশ ভারতের, আর চীন দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস দেশ।

সূত্র: ডেইলি অবজারভার